হাটহাজারী প্রতিনিধি: হাটহাজারীতে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে সরকার। জমি গুলোর ব্যক্তি মালিক নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলা না পাওয়ায় ভূমি অফিস সহকারীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে অপমান সইতে না পেরে আব্দুল মোনাফ (৬২) নামের এক বৃদ্ধ অসুস্থ হয়ে পড়েন।
এ ঘটনার একমাস বিশ দিন পর হার্ট অ্যাটাকে ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তাঁর মেয়ে।
ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার উত্তর ফতেয়াবাদ পশ্চিম খাগড়িয়া ছড়ারকুল এলাকার আব্দুল মোনাফ (৬২) তাঁর স্ত্রী মৃত নুর বেগমের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কিছু জমি পৌরসভার পশ্চিম আলমপুর এলাকায় ‘তিতাগাজী জামে মসজিদ’ এর পক্ষে মসজিদ মতোয়াল্লীর কাছে দান করেন। পরে দানকৃত ওই জমি এল.এ মামলা ২৯/১৭ মূলে ‘ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স’ এর অনুকূলে অধিগ্রহণ করা হয়। মসজিদ কমিটির নামে নামজারি না থাকায় আব্দুল মোনাফ ও তার মেয়ে মিনু আক্তারসহ তার অপরাপর ভাই-বোন মসজিদ কমিটিকে গত ১৯ সালের ১৫ অক্টোবর ৩৪০০ নং অপ্রত্যাহারযোগ্য পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রি করে দেন।মসজিদ কমিটির সাথে যোগাযোগ করে জানা যায় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি রেজিস্ট্রি দলিল দেওয়ার সময় আব্দুল মোনাফ মসজিদ কমিটি থেকে ৩০ লক্ষ টাকা গ্রহণ করেন। যেহেতু জমিটি অধিগ্রহণ করা হয়েছে সেহেতু আব্দুল মোনাফের নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলাটি খারিজ হয়ে যায়।
সূত্রে আরো জানা যায়, নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলাটি খারিজ হওয়ার বিষয়ে আবেদনকারী আব্দুল মোনাফ ভূমি অফিস সহকারী বিজয় নন্দ বড়ুয়ার সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে মা বাপ তুলে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন এবং চিৎকার করে বলেন আমি টাকা দেয়নি বলে আমার কাজ হয়নি! এক পর্যায়ে রাগান্বিত হয়ে আব্দুল মোনাফকে বেয়াদব বলে অখ্যায়িত করেন বিজয় নন্দ বড়ুয়া। চিৎকার চেঁচামচির এক পর্যায়ে অফিস সহকারী নিউটন বড়ুয়াসহ অন্যান্য কর্মচারীগণ তাকে শান্ত করার চেষ্টা করেন। তখন নিউটন বড়ুয়া আব্দুল মোনাফকে বলেন, সহকারী কমিশনার ভূমি স্যার আসলে দেখা করবেন, স্যার আপনাকে মামলা খারিজের বিস্তারিত বুঝিয়ে বলবেন। এরপর তিনি শান্ত হয়ে চলে যান।
ঘটনাটির ১ মাস ২০ দিনপর আব্দুল মোনাফের হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ তোলেন তাঁর বড় মেয়ে মিনু আক্তার। ভূমি অফিস সহকারী দুই কর্মকর্তার অসৎ আচরণ সইতে না পেরে দিনমজুর বাবা হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে মর্মে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
অভিযোগে মিনু আক্তার বলেন, আমার মায়ের পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কিছু জমি ১৭সালে উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণ করে সরকার। খতিয়ান বাতিলের জন্য ১৯ সালের ডিসেম্বর মাসে এসিল্যান্ড বরাবর লিখিত আবেদন করেন আমার বাবা। কিন্তু দীর্ঘ সাড়ে তিন বছর ধরে এসিল্যান্ড অফিসে ঘুরাঘুরি করলেও খতিয়ান বাতিল না করে উল্টো আমাদের আবেদনটি খারিজ করে দেন এসিল্যান্ড। গত আগস্টের ১ম সাপ্তাহের একদিন নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়ার কারণ জানতে চাইলে অফিস সহকারী বিজয় নন্দ বড়ুয়া ও নিউটন বড়ুয়ার হাতে লাঞ্ছিত এবং অপমানিত হন আমার বাবা। বাড়ি এসে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর গত ২৩ সেপ্টেম্বর আব্দুল মোনাফ হার্ট অ্যাটাক করেন। চিকিৎসার জন্য প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্মরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এদিকে মেয়ের অভিযোগ এসিল্যান্ড অফিস সহকারীর দুর্ব্যবহার সইতে না পেরে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই অফিস সহকারীর শাস্তি দাবি করেন আব্দুল মোনাফের বড় মেয়ে মিনু আক্তার।
হাটহাজারী সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আবু রায়হান বলেন, আব্দুল মোনাফ ও তাঁর মেয়ে মিনু আক্তার নালিশী জমি তিতাগাজী জামে মসজিদের নামে মতোয়াল্লী আব্দুল লতিফের বরাবরে রেজিস্ট্রি দলিল মূলে দান করেন। পরবর্তীতে উক্ত জমি অধিগ্রহণ করা হলে মসজিদ কমিটির সাথে লিয়াজো করে মসজিদ কমিটির কাছ থেকে অধিগ্রহণকৃত টাকা বুঝিয়ে নেন। এর পরবর্তীতে আবার তিনি খতিয়ান বাতিলের জন্য নামজারি পুনর্বিবেচনা মামলাও করেন। এটা খারিজের ঘটনায় আমার অফিস সহকারীদের সাথে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে মা বাপ তুলে অকথ্য ভাষায় একে অপরকে গালিগালাজ করে। পরে তিনি আমার সাথে দেখা করেন। আমি উক্ত বিষয়টি তাকে বিস্তারিতভাবে বুঝিয়ে দিলে তিনি শান্ত হয়ে চলে যান। এদিকে তিনি আবার নিজে অপমান সইতে না পারায় ১মাস ২০দির পরে হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুবরণের অভিযোগ! যা বিশ্বাসযোগ্য নয়! ইতিমধ্যে অফিস সহকারী বিজয় নন্দ বড়ুয়া ও নিউটন বড়ুয়াকে অন্য উপজেলায় বদলি করা হয়েছে এবং ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করা হবে।