মহেশখালী প্রতিনিধি: ধেয়ে আসা ঘুর্ণিঝড় মোখার প্রভাবে সাগরের পানি স্বাভাবিক মাত্রা অতিক্রম করতে শুরু করায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছে উপকূলে বাস করা মানুষ। শনিবার (১৩ মে) সকাল ৯ টার পর থেকে আশ্রয়ে জন্য ছুটছে উপকূলের মানুষ। দুপুরের দিকে ১০নং মহাবিপদ সংকেত অতিক্রম করার সাথে মানুষ জান-মাল নিয়ে তাৎক্ষনিক ছুটতে দেখা গেছে।
এর আগের দিন শুক্রবার বিকাল থেকে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং করে সরে যেতে বলা হলেও সরেনি কেউ। বিপদ সংকেত বেড়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত সরে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঘুর্ণিঝড় ‘মোখা’র আসন্ন প্রভাব থেকে বাঁচতে শুক্রবার সন্ধ্যার আগেই উপকূলের সব লোকজনকে নিরাপদে সরে যেতে নির্দেশ দেয় প্রশাসন। কিন্তু এতে কেউ সরেনি। সংকেত বেড়ে যাওয়ায় নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধানে ছুটে চলছে এসব মানুষ।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছেন, উপজেলার উপকূলীয় এলাকা সবকটি ইউনিয়নের বেশিরভাগ নিচু এলাকা, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কুতুবজোমের ঘটিভাঙ্গা, তাজিয়াকাটা ও সোনাদিয়া,শাপলাপুরের জেমঘাটসহ বেশ উপকূলীয় ঝুঁকির মুখে রয়েছে। নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলা মানুষগুলো আশ্রয়কেন্দ্র, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও উচু জায়গায় ঠাঁই নিচ্ছে। ধলঘাটা ইউনিয়নের লোকজন সকাল থেকে কালারমারছড়া মোহাম্মদ শাহ ঘোনা ঘাট দিয়ে আসতে শুরু করেছে। তারা আশ্রয় কেন্দ্রসহ স্বজনদের বাড়ীর বিভিন্ন স্থানে আশ্রয় নেয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
একভাবে কুতুবজোম ইউনিয়নের সাগরের কুল ঘেঁষে একটি ওয়ার্ড এটি হচ্ছে সোনাদিয়া ওই এলাকার স্থানীয় এমইউপি সদস্য একরাম জানান, তার এলাকার লোকজন ৮নং মহাবিপদ সংকেত কিংবা ৪ নম্বর বিপদ সংকেতসহ বিভিন্ন ধরনের সংকেত পায়। তবে কোনটার জন্য কোনভাবে কাজ করতে হবে, নিরাপদ স্থানে যেতে হবে কিনা কিংবা বিপদ সংকেত আরও বাড়তে পারে কিনা তা তারা বুঝে উঠতে পারে না। সোনাদিয়া গ্রামে শতখানিক মানুষ শুক্রবার নিরাপদ স্থানে চলে গেলেও অধিকাংশ লোকজন নিজ ঘরে রয়ে যায়। মহাবিপদ সংকেতের পর শনিবার সকাল থেকে নারী-পুরুষ নৌ যোগে নিরাপদ আশ্রয় স্থানে ছুটছেন বলে জানান।
তিনি আরও জানান, পূর্বেরপাড়া যে আশ্রয় কেন্দ্রটি আছে সেটি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেখানে লোকজন আশ্রয় নিতে পারছে না। তবে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য বার বার তাগিদ দেওয়া হচ্ছে।
আবহাওয়া অধিদফতরের বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত ‘মোখা’ উত্তর- উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ সকালে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৮১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল।
এটি আরও উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে আগামীকাল রবিবার (১৪ মে) সকাল ৬ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টার মধ্যে কক্সবাজার-উত্তর মিয়ানমার উপকূল অতিক্রম করতে পারে। (১৩ মে) সন্ধ্যা থেকে কক্সবাজার ও আশেপাশের উপকূলীয় এলাকায় অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’-এর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ১৬০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৭৫ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর খুবই বিক্ষুদ্ধ রয়েছে। এজন্য কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ ইয়াছিন জানান, উপজেলায় কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। মেড়িকেল টিম সার্বক্ষনিক তদারকি করছেন। মহাবিপদ সংকেত দিলে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে লোকজনকে নিরাপদ স্থানে চলে আসতে শুরু করেছে।
আশেক উল্লাহ রফিক এমপি জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা থেকে যত কম ক্ষতি হয় সব ধরনের প্রস্তুতি আমাদের থেকে নেওয়া হয়েছে। এছাড়া শুকনা খাবার পানি ইত্যাদি মজুদ রাখা হয়েছে।