“Know thyself”(নিজেকে জানো)- উক্তিটি সক্রেটিসের। একজন সাঁড্গা‘র অধিবাসী সাঁড্গাইয়ে হিসেবে আপনি নিজেকে কতটুকু জানেন? কেন আপনি সাঁড্গাইয়ে? আপনার মাতৃভাষা কি? হয়তবা আপনি জানেন না। কারণ আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেননি বা নিজেকে জানতে চাননি। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করেননি, কেন আমাকে সাঁড্গাইয়ে বলা হয়? আমার মাতৃভাষা কি?
আপনি কেন সাঁড্গাইয়ে এবং আপনার মাতৃভাষা কি, এটা না জানার পিছনে আরেকটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, নোংরা সাংস্কৃতিক রাজনীতি। পুরো বিশ্বে এ রাজনীতি অনেক দিন আগে থেকে প্রচলিত। বেশি দূরে নয়, প্রতিবেশি দেশ এবং চীনের দিকে তাকালেই ভাষার রাজনীতির ব্যাপারে আপনি ধারণা পাবেন। এ বছর-ই(২০২২) ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ্ যখন সংসদের আনুষ্ঠানিক ভাষা কমিটির বৈঠকে বলেন, “নবম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের হিন্দি ভাষা শেখাতে হবে।”(প্রথম আলো, ১১ এপ্রিল,২০২২) এরপর শুরু হয়েছে বিতর্ক।যার প্রতিবাদে আন্দোলন হয় এবং এমন সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে।অন্যদিকে চীন, উইঘুর এবং তিব্বতিদের ভাষা এবং সংস্কৃতিকে পরিকল্পিতভাবে ধ্বংস করে দিচ্ছে।কারণ ,ভাষা এবং সংস্কৃতির সাথে চেতনার একটা সম্পর্ক আছে।
আমরাও ১৯৪৭ সালের আগ-পর থেকে, বিশেষ করে ১৯০৫ সালের পর বা বিশ শতকের শুরু থেকে প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে এ নোংরা সাংস্কৃতিক রাজনীতির শিকার।এ ব্যাপারে বিশিষ্ট ভাষাবিদ শিশির ভট্টাচার্য্য বলেন-“চট্টগ্রামি, সিলেটি ইত্যাদি ‘ভাষা’ নাকি ‘উপভাষা’ এ নিয়ে যে বিতর্ক তা যতটা না ভাষাজ্ঞৈানিক তার চেয়ে বেশি রাজনৈতিক।”
বেঁচে থাকার মধ্যে সার্থকতা থাকে তখনই, যখন মানুষ তার অধিকার নিয়ে বাঁচতে পারে। মানুষের সবচেয়ে বড় অধিকার হচ্ছে মাতৃভাষার অধিকার। কারণ, তার সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে দামি অর্জন হচ্ছে মায়ের কাছ থেকে শেখা ভাষা বা মাতৃভাষা। চট্টলার মানুষ অনেক কিছু থেকে বঞ্চিত। কিন্তু সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হচ্ছে, “সাঁড্গাইয়ে ভাষা আঁর মা‘র ভাষা”এ কথা বলার, লেখার এবং পড়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত। চট্টলার মানুষকে পড়তে , শিখতে বা লিখতে দেওয়া হয়নি যে, সাঁড্গাইয়ে ভাষা তার মাতৃভাষা। একজন চট্টলার মানুষ তার মায়ের কাছ থেকে মাতৃভাষা হিসেবে সাঁড্গাইয়ে ভাষা শিখলেও সে যেদিন থেকে পাঠশালায় পা রাখছে সেদিন থেকে সে আর পড়তে, শিখতে বা লিখতে পারছে না যে, “সাঁড্গাইয়ে ভাষা” আমার মাতৃভাষা। অথচ, এ ভাষা বৃহত্তর চট্টলার সর্ববৃহৎ এবং এক আদি জনগোষ্ঠীর মাতৃভাষা।
মাতৃগর্ভ থেকে পৃথিবীতে আসার পর একটি শিশু ভাব প্রকাশ করার জন্য যা অর্জন করে তা হলো ভাষা। একটি শিশু যখন তার মায়ের কাছেই বড় হতে থাকে তখন সে তার মায়ের কাছ থেকেই ভাব প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে ভাষাটা শিখে। মায়ের পাশাপাশি অন্যান্য নিকট জনের কাছ থেকেও শিখে। কিন্তু প্রধান ভূমিকায় থাকে মা। তাহলে আমরা মাতৃভাষাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করতে পারি- শিশু যে ভাষা প্রথমে তার মা এবং অন্যান্য নিকট জনের কাছ থেকে শিখে সে ভাষা-ই মাতৃভাষা।
মাতৃভাষার সংজ্ঞা
এবার আমরা জেনে নেয়, বিভিন্ন অভিধানে এবং ভাষাবিজ্ঞানিরা মাতৃভাষাকে কিভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন। উইকিশনারির সংজ্ঞা মতে- ১) ) The language one first learned; the language one grew up with; one’s native language.(কারো প্রথম শেখা ভাষাটি বা যে ভাষাটি শিখে কেউ বড় হয়, সেটাই তার মাতৃভাষা।),২)The language spoken by one’s ancestors.(কারো পূর্বপুরুষ থেকে বলে আসা ভাষাটিই তার মাতৃভাষা।)উল্লেখ্য যে,Mother tongue বা মাতৃভাষার ইংরেজি সমার্থক হচ্ছে-firt language; native language | কলিন্স অভিধানের সংজ্ঞা মতে- Your mother tongue is the language that you learn from your parents when you are a baby. (শিশু অবস্থায় যে ভাষাটি তোমার মাতা-পিতার কাছ থেকে শিখ সে ভাষা-ই তোমার মায়ের ভাষা।) ক্যামব্রিজ অভিধানের সংজ্ঞা মতে- The first language that they learned when they were a baby, rather than a language learned at school or as an adult. (প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় বা বিদ্যালয়ে যে ভাষা শিখে সেটি নয় বরং শিশু অবস্থায় যে ভাষা শিখে সেটিই মাতৃভাষা।) অক্সফোর্ড অভিধানের সংজ্ঞা মতে- The language that you first learn to speak when you are a child. (শিশু অবস্থায় প্রথম যে ভাষায় কথা বলা শিখ সেটিই মাতৃভাষা।) ভাষাবিজ্ঞানি রিচার্ড নর্ডকুয়িস্টের মতে- – The term “mother tongue” refers to a person’s native language-that is, a language learned from birth. (যে ভাষাটি একজন ব্যক্তি জন্মের পর থেকে শিখে ঐটি তার মাতৃভাষা।) (ThoughtCo.com, July 25,2019)|।স্ট্যাটিস্টিক্স কানাডা এর মতে- Mother tongue refers to the first language learned at home in Childhood.)(মাতৃভাষা বলতে প্রথম ভাষাকে বুঝায়, যে ভাষা শৈশবে বা শিশুকালে বাড়িতে শিখে।) |) (Statistics Canada, July 29, 2022) বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের সংজ্ঞা মতে- শিশুর মায়ের মুখ থেকে যে ভাষা শিখে(সেটিই মাতৃভাষা)। নূতন বাঙ্গালা অভিধানের সংজ্ঞা মতে- জন্মের পর হইতে যে ভাষা শিক্ষা হয় তাহা (মাতৃভাষা-mother tongue)| ড. সৌমিত্র শেখর বলেন-“জন্মলগ্ন থেকে স্বাভাবিকভাবে মানুষ নিজের মায়ের কাছে যে ভাষাটি শিক্ষা পায়, তাকেই মাতৃভাষা বলে।”(বাংলা ব্যাকরণ ও নির্মিতি,৮ম শ্রেণি,২০২১)।
উপরিউক্ত সংজ্ঞা থেকে মাতৃভাষা বলতে আমরা যা বুঝি তা হলো- আমাদের মায়ের মুখ থেকে শোনা এবং শেখা প্রথম ভাষাটিই হচ্ছে আমাদের মায়ের ভাষা বা মাতৃভাষা। সুতরাং, সাঁড্গাইয়েদের মায়ের ভাষা বা মাতৃভাষা “সাঁড্গা বা সাঁড্গাইয়ে ভাষা”। অথচ, বৃহত্তর চাঁটগা এবং পৃথিবীর অন্যান্য স্থানে বসবাসরত দুই কোটিরও বেশি সাঁড্গাইয়েদের মায়ের ভাষা বা মাতৃভাষা আজ নোংরা রাজনীতির কবলে পরে উপভাষা বা আঞ্চলিক ভাষার তমকা নিয়ে ধ্বংসের পথে। তবে আশার কথা, একুশ শতকের “সাঁড্গাইয়ে তরুণরা খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেছে যে, “সাঁড্গাইয়ে ভাষা” আমাদের মাতৃভাষা এবং স্বতন্ত্র ভাষা। বিশিষ্ট ভাষাবিদ শিশির ভট্টাচার্য্য ‘সাঁড্গাইয়ে’ ভাষাকেই তাঁর মাতৃভাষা হিসেবে সম্বোধন করেন।এ ভাষাকে আমাদের টিকিয়ে রাখতেই হবে।
ইসলাম ধর্মে মাতৃভাষার গুরুত্ব
ভাষার পাশাপাশি আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা মাতৃভাষার প্রতিও গুরুতারোপ করেছেন। তিনি মানব জাতিকে মাতৃভাষার গুরুত্ব অনুধাবনের জন্য পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন:
(সুরা ইব্রাহিম-৪) وَ مَاۤ اَرۡسَلۡنَا مِنۡ رَّسُوۡلٍ اِلَّا بِلِسَانِ قَوۡمِهٖ لِیُبَیِّنَ لَهُمۡ
অর্থ: আমি সব পয়গম্বরকেই (নবী-রাসূল) তাদের স্বজাতির ভাষাভাষী করেই প্রেরণ করেছি, যাতে তাদেরকে স্পস্টভাবে বুঝাতে পারে। (এখানে স্বজাতির ভাষা বলতে মাতৃভাষাকে বুঝানো হয়েছে।) যেমন হযরত দাউদ(আ.)-কে তার নিজ ভাষা গ্রিক ভাষায় যাবুর কিতাব নাযিল করেছেন। হযরত মুসা(আ.)-কে তাওরাত হিব্রু ভাষায়। হযরত ঈসা(আ.)-কে ইঞ্জিল সুরিয়ানি ভাষায়। আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর উপর পবিত্র কোরআনে কারিম নাযিল করেছেন আরবের ভাষা আরবিতে। ইসলাম মাতৃভাষার প্রতি যথার্থ গুরুত্ব দিয়ে মায়ের ভাষাকে মর্যাদার উচ্চমানে সমাসীন করেছে।
উপরিউক্ত আয়াত দ্বারা আমরা বুঝতে পারি যে, কোন ভাষার উপর অন্য কোন ভাষার প্রাধান্য নেই এবং কোন ভাষাকেই অবমূল্যায়ন করা বা ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। পবিত্র এ আয়াত দ্বারা প্রত্যেক ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া, সম্মানের চোখে দেখা এবং প্রজন্মের পর প্রজন্মকে ব্যবহারের মাধ্যমে টিকিয়ে রাখার আবশ্যক র্বাতা এবং গুরুত্ব দিয়েছেন।
ইসলামে মাতৃভাষা নিয়ে গর্ববোধ করার বৈধতা
বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) মায়ের ভাষায় কথা বলতে গর্ববোধ করতেন। তাই ইসলামে মাতৃভাষা নিয়ে গর্ব করা অপরাধ বা পাপের নয় বরং জায়েয বা বৈধ বলেই প্রমাণিত হয়।
তিনি বলতেন-“আরবদের মধ্যে আমার ভাষা সর্বাধিক সুফলিত। তোমাদের চাইতেও আমার ভাষা অধিকতর মার্জিত ও সুফলিত।”(আল-মু’জাম, ৫/৩৫৫)।
রহমতে আলম নবী মুহাম্মদ (সা.) নিজের মাতৃভাষার শুকরিয়া আদায় করতে গিয়ে বলেন-“আরবের সবচেয়ে মার্জিত ভাষার অধিকারী সাদিয়া গোত্রে আমি মানুষ হয়েছি। তাদেরই কোলে আমার মুখ ফুটেছে। তাই আমি সর্বাধিক সুফলিত ভাষা ব্যক্ত করেছি।”(আল-বদরুল মুনীর, দারূল হিজরাত, ৮/২৮১)
উপরিউক্ত হাদিসগুলো দ্বারা প্রমাণিত হলো যে, মাতৃভাষা নিয়ে গর্ব করা জায়েয বা বৈধ, সুন্নাত ও সওয়াবের কাজ এবং এতে আল্লাহ্র নেয়ামতের শুকরিয়ারও আদায় হয়। অথচ, আমরা আমাদের মাতৃভাষা ”সাঁড্গাই্য়ে ভাষা” কে চরমভাবে অবহেলা করছি যা জঘণ্যতম অপরাধ এবং পাপের কাজ।
হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস (রাদি.) থেকে বর্ণিত-মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন-“তিন কারণে তোমরা আরবিকে ভালোবেসো; যেহেতু আমি আরবি ভাষায় কথা বলি, কোরআন আরবি ভাষায় লেখা এবং জান্নাতের ভাষাও হবে আরবি।” (সুনানে বায়হাক্বি)। কিন্তু আরবি পরকালের ভাষা হওয়া সত্তে¡ও সব নবী-রাসুল আরবি ভাষাভাষী ছিলেন না; এমনকি সব আসমানি কিতাবও আরবি ভাষায় লেখা হয়নি। আমরা জানি, কুরআনুল কারীম ব্যতিত বাকি তিনটি প্রথম আসমানী কিতাব ঐ নবীগণের নিজ নিজ মাতৃভাষায় নাযিল করা হয়েছে। এ থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় যে স্বয়ং আল্লাহ্ তায়ালা মাতৃভাষাকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়েছে।
অন্যান্য ধর্ম, জাতি এবং মনিষীর কাছে মাতৃভাষার গুরুত্ব
মাতৃভাষার গুরুত্ব বর্ণণা করতে গিয়ে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান অন্যান্য ধর্ম, জাতি এবং মনিষীরা মাতৃভাষার যে গুরুত্ব প্রদান করেছেন তা “মাতৃভাষার পক্ষে” নামক প্রবন্ধে তুলে ধরেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, অথর্ববেদে বলা আছে, “মাতৃভাষা থেকে আমাদের দূরে সরিয়ে দিও না। আমরা যেনো সবসময় মাতৃভাষার সেবা করতে পারি। যারা সৃষ্টিকর্তার গুণগান করতে চান তারা মাতৃভাষায় প্রার্থণা করুন। মাতৃভাষায়-ই শুদ্ধতা ও সঠিকতার চর্চা করা যায়। মাতৃভাষার প্রতিটি শব্দ আমাদের রক্তের বাঁধনে বাঁধা। মাতৃভাষার প্রতিটি শব্দ দিয়ে মনের মতো অর্থের প্রকাশ ঘটে। প্রতিটি ‘মহান কলা‘ই মাতৃভাষায় শিল্পীত হয়। মাতৃভাষায় আমরা সৃষ্টিকর্তার প্রতি ভক্তি প্রদর্শন ও তার গুণকীর্তন করতে পারি।”
তিনি আরো উল্লেখ করেন, অস্ট্রেলিয়ার নুনগা জনগোষ্ঠীর একটি আদিবাসী গানে বলা হয়, “আমি নুনগা এবং আমি তাতে গর্বিত। এটা আমাদের, নিজেদের নাম ধরে ডাকতে ও অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে এটা আমাদের নিজস্ব ভাষা, তুমি কখনো এটাকে দূরে সরাতে পারবে না”।
একই প্রবন্ধে তিনি মনিষীদের কাছে মাতৃভাষার গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করেন যে, পর্তুগীজ কবি ফার্নাদো পেসোয়া বলেন, “আমার মাতৃভূমি হলো পর্তুগীজ ভাষা”। ফিলিস্তিনের কবি মাহমুদ দারবিশ বলেন, তার দেশ সৃষ্টি হয়েছে ‘লানা বালেদ মিন কালাম’ শব্দগুচ্ছ দিয়ে। জালাল উদ্দিন রুমি বলেন, “ফরাসি ভাষায় সব বলো, একান্ত বাধ্য হলে আরবী ব্যবহার করো”। তিনি বলেন “নিজের ভাষায়ই ভালোবাসার প্রকাশ হয়ে থাকে”। ”(bangla.bdnews24.com/opinion, 21 Feb 2011)
সাঁড্গাইয়ে ব্যক্তিত্বের মতামত
সাঁড্গাইয়েদের মাতৃভাষা ‘সাঁড্গাইয়ে’, এ বিষয়ে সিপ্লাস টিভিকে দেওয়া সক্ষাৎকারে কয়েকজন সাঁড্গাইয়ে ব্যক্তিত্বের মতামত এখানে তুলে ধরা হলো। বিখ্যাত কন্ঠশিল্পী, গীতিকার ও সুরকার নকিব খান বলেন-“আঁই মনে গরিদি সাঁড্গাইয়ে ভাষা ইবে আঁর মা’র ভাষা, আঁর বাফ’র ভাষা। হাজেই ইবেরে আঁরাত্তে ছদ্দা গরন ফরিবু।”(আমি মনে করি যে ,চাঁটগাইয়া(সাঁড্গাইয়ে) ভাষা আমার মায়ের ভাষা, আমার বাবার ভাষা। কাজেই এটাকে আমাদের শ্রদ্ধা করতে হবে।)(Cplustv, Sep 15, 2016) বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন অধ্যাপক, চট্টলার এ কে খান পরিবারের সন্তান ফয়সাল সিদ্দীকি বলেন-“সত্যি হথা হইতু গেলে আঁরা যেভাবে বাংলাদেশত বাংলা বাংলা হই মাতৃভাষা, আঁর মাতৃভাষা অইলদি সাঁড্গাইয়ে…আঁর মাতৃভাষা সাঁড্গাইয়ে, আঁরা অভ্যইস্ত ছোডহালত্তুন সাঁড্গাইয়ে হইতে।”(আমরা যেভাবে বাংলাদেশে বাংলা বাংলা মাতৃভাষা বলি, সত্যি কথা বলতে গেলে আমার মাতৃভাষা চাঁটগাইয়া…আমার মাতৃভাষা চাঁটগাইয়া, আমরা অভ্যস্ত ছোটকাল থেকে চাঁটগাইয়া বলতে।) (Cplustv, Aug 26, 2016) ) বর্তমান সময়ের আলোচিত অভিনেতা নাসির উদ্দিন খান বলেন-“মাতৃভাষা মাইনি কি? যে যে ভাষাত হথা হই, যে মুরং ওর মুরং ভাষা ইবে ইতের মাতৃভাষা।…তই আঁর সিটেই্ংগে ইবে আঁর মাতৃভাষা।”(মাতৃভাষা মানে কি? যে যে ভাষায় কথা বলে, যে মোরং ,মোরং ভাষা তার মাতৃভাষা…আর আমার চিটেই্ংগে ভাষাটাই আমার মাতৃভাষা।) (Cplustv, Jul 20, 2022)।
পরিশেষে আমরা বুঝতে পারলাম, কেন আমরা ‘সাঁড্গাইয়ে’। আমাদের মাতৃভাষা ‘সাঁড্গাইয়ে’ বলেই আমরা ‘সাঁড্গাইয়ে’। পৃথিবীতে অনেক ভাষা আছে, যেসব ভাষায় কথা বলার মানুষ আমাদের তুলনায় একেবারে নগণ্য সংখ্যক।তা সত্তে¡ও তারা তাদের ভাষাকে টিকিয়ে রাখতে বদ্ধপরিকর। এটাতো বৃহত্তর চট্টলার চাকমা,মারমা,মুরং…দের দিকে তাকালেই বুঝতে পারি। আর আমরা আমাদের এতো বড়ো একটা জনগোষ্ঠীর স্বতন্ত্র ভাষাকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি একমাত্র আমাদের অজ্ঞতার কারণে। যে ভাষা হাজার হাজার বছর ধরে আমাদের পূর্বপুরুষ বলে আসছে। আজ সে ভাষাকে আমরা ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছি। এ ভাষাকে আমাদের পূর্বপুরুষ আমাদের প্রজন্ম পর্যন্ত নিয়ে এসেছে। আমরা কি তা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে দিয়ে যাব না? হ্যাঁ, দিয়ে যাব। একুশ শতকের সাঁড্গাইয়ে তরুণ প্রজন্মও বদ্ধপরিকর যে, তারা সাঁড্গাইয়ে ভাষাকে টিকিয়ে রাখবেই, ইন্শা আল্লাহ্।
লেখক
মুহাম্মদ রেজাউল করিম
ইংরেজি শিক্ষক, গিয়াস উদ্দীন ইসলামিক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নারায়ণগঞ্জ।