রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: রাঙ্গুনিয়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে এক কৃষকের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বৃহস্পতিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ভোরে উপজেলার পদুয়া ইউনিয়নের ত্রিপুরা সুন্দরী পাহাড়ে গুলিবিদ্ধ লাশটি দেখতে পান স্থানীয়রা। পুলিশ লাশটি উদ্ধার করেছেন। নিহত কৃষকের নাম সুমন দে শিশির (৫৫)। সে একই ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ড লক্ষীছড়া গ্রামের দূর্গা চরণ দে’র ছেলে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ওবায়দুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল থেকে লাশটি উদ্ধার করেছি। কপালের মাঝখানে একটি গভীর ক্ষতের চিহ্ন রয়েছে। ধারণা করছি গুলিবিদ্ধ হয়েছেন তিনি। তবে বিষয়টি নিশ্চিতে লাশটি পরিক্ষার জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে।”
জানা যায়, শিশিরের বাড়ি পদুয়া লক্ষীছড়া হলেও ত্রিপুরা সুন্দরী এলাকায় তিনি পানের বরজ, ফল, শসাসহ নানা জাতের ফসলের ক্ষেত করেছেন। সেখানেই পাহাড়ের উপর ছোট একটা টিনের ঘরে এসব ক্ষেত পাহাড়া দেয়ার জন্যই থাকতেন তিনি। আশেপাশে কোন ঘর না থাকায় দুর্গম এই এলাকায় তাকে কে বা কারা খুন করেছে তা জানা যায়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ। তবে সন্ত্রাসীরা চাঁদার দাবীতে তাকে গুলি করে হত্যা করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক পুত্র সন্তান রয়েছে। দুই মেয়ের বিয়ের পর তার একমাত্র পুত্র প্রবাসে থাকেন বলে জানা যায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পানের বরজ থেকে উঠানো পানগুলো পাহাড়ের উপর টিনের ঘরটিতে একটি টুকরীতে গুছানো ছিল। সেই পানের টুকরীর উপরই পড়ে ছিল লাশটি। কপালের ঠিক মাঝখানে গভীর ক্ষত রয়েছে। উৎসুক মানুষ লাশটিকে ঘিরে রেখেছে। এসময় স্থানীয় সঞ্জয় দে নামে এক ব্যক্তি জানান, পদুয়া রাজারহাটের নির্ধারিত বাজারের দিন (বৃহস্পতিবার)। সম্ভবত পানগুলো টুকরিতে সাজিয়ে বাজারে নেয়ার জন্যই তিনি প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। কিন্তু এসব পান আর বাজারে নেয়া হল না। তার আগেই কৃষকটির এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যায় না।
পদুয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক বদিউজ্জামান বদি বলেন, “আমি নিজে ঘটনাস্থলে গিয়েছি। কপালের মাঝখানে গুলির চিহ্ন রয়েছে এবং হাতেও ক্ষত আছে। ত্রিপুরা সুন্দরী পাহাড়ি এলাকায় সন্ত্রাসীদের আনাগোনা রয়েছে। সেখানে এই কোন বসতি নেই। একটি পাহাড়ে শুধুমাত্র এই কৃষকই থাকতেন। সম্ভবত সন্ত্রাসীদের কোন কিছু এই কৃষক দেখেছে কিংবা জেনে গেছে। অথবা তার কাছ থেকে চাঁদা চেয়ে পাইনি, তাই হয়ত তাকে এভাবে খুন করা হতে পারে বলে আমার মনে হয়।”
স্থানীয়রা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সম্প্রতি দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়ায় আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি হয়েছে। কিছুদিন আগে পদুয়া মহিষের বাম এলাকায় পুলিশের উপর হামলা, তার কিছুদিনের মধ্যে একজনকে ঘরে প্রবেশ করে খুন, সরফভাটায় সন্ত্রাসীদের বেপরোয়া চাঁদাবাজীতে শত শত পরিবার ঘর ছাড়া। এরমধ্যেই সরফভাটাতেই মায়ের সামনে সন্তানকে গুলি করে হত্যা, দোকানে বসে থাকা ছয় গ্রামবাসিকে কুপিয়ে যখমসহ একটি চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপের বেপরোয়া সন্ত্রাসী কার্যক্রমে অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন সাধারণ মানুষ। এদের আইনের আওতায় আনতে পুলিশের পাশাপাশি অন্যান্য বাহিনীর সমন্বয়ে সাড়াশি অভিযান চালানো উচিত বলে মন্তব্য করেছেন স্থানীয়রা।