রাঙ্গুনিয়ায় গ্রাহকের প্রকাশ্য ছুরিকাঘাতে এনজিও কর্মী খুন

(বাম দিক থেকে) নিহত এনজিও কর্মী চম্পা চাকমা এবং ঘাতক এনাম
CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন

রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: রাঙ্গুনিয়ায় এনাম (৩০) নামে এক গ্রাহকের প্রকাশ্যে ছুরিকাঘাতে পদক্ষেপ নামে একটি এনজিও সংস্থার এক কর্মী খুন হয়েছে।

রোববার (৫ মার্চ) রাত সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ধামাইরহাট ওয়ান ব্যাংকের সামনে সড়কের পাশে এই ঘটনা ঘটে।

নিহত এনজিও কর্মীর নাম চম্পা চাকমা (২৯)। সে পদক্ষেপ মানবিক উন্নয়ন কেন্দ্র রাঙ্গুনিয়ার ধামাইরহাট এলাকায় অবস্থিত হোসনাবাদ ব্রাঞ্চের সহকারী ব্রাঞ্চ ম্যানেজার (ঋণ) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তিনি রাঙামাটি সদরের বন্দুকভাঙা এলাকার শান্তিময় চাকমার মেয়ে।

অন্যদিকে ঘাতক এনাম পারুয়া ইউনিয়নের ১নম্বর ওয়ার্ড উত্তর পারুয়া কালিমন্দির এলাকার মো. নুরুজ্জামানের ছেলে। সে পলাতক রয়েছে।

রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি মো. মাহবুব মিলকী ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “রাত ৮টা ২০ মিনিটের দিকে লালানগর ওয়ান ব্যাংকের পাশে অবস্থিত পদক্ষেপ অফিস থেকে কাজ শেষে চম্পা চাকমা তার এক সহকর্মীসহ বাড়ি যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়। সেখানে এনাম নামে এক ব্যক্তি আগে থেকে দাঁড়িয়ে ছিলো। সে তার বোনের মাধ্যমে পদক্ষেপের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছিলো। এনজিও কর্মী চম্পা অফিস থেকে নামার সাথে সাথে তার সাথে ঋণের কিস্তির বিষয়ে কথা কাটাকাটি শুরু করে ঘাতক এনাম। এক পর্যায়ে পেছন থেকে ছুরি বের করে চম্পার গলায় শ্বাসনালি বরাবর আঘাত করে সে পালিয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মূলত ছুরিকাঘাত গুরুতর না হলেও শ্বাসনালি কেটে যাওয়ায় তার মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ছুরিটা জব্দ করা হয়েছে।”

তিনি আরও বলেন, “ঘাতক এনামের বোন পদক্ষেপ থেকে এক লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলো। সেই ঋণটা মূলত এনামই চালাতো। গত ২৮ ফেব্রæয়ারি ওই ঋণের একটি কিস্তি দেয়ার কথা থাকলেও এনাম দিতে পারেনি। ঋণের কিস্তি পরিষোধের জন্য এনামের বোনকে পদক্ষেপ অফিসের পক্ষ থেকে চম্পা চাকমা চাপ দিচ্ছিলো। এর জেরেই এই ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। এটির ময়নাতদন্ত করা হবে। ঘাতক এনামকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এই বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।”

নিহত চম্পা চাকমার সহকর্মী পদক্ষেপের কমিউনিটি ম্যানেজার ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সপ্তর্ষী চাকমা বলেন, “আমি আর চম্পা চাকমা অফিস শেষে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বের হয়েছিলাম। রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষাকালীন সময়ে এনাম নামে আমাদের এক গ্রাহক এসে চম্পা চাকমার সাথে ঋণের কিস্তির বিষয়ে বাকবিতন্ডা করতে থাকে। আমি তাকে বার বার অনুরোধ করছিলাম শান্ত হওয়ার জন্য। একপর্যায়ে সে তার পেছন থেকে একটি ছুরি বের করে চম্পা চাকমাকে গলার কন্ঠনালীর কাছে ছুরিকাঘাত করে পালিয়ে যায়। স্থানীয়রা তাকে ধাওয়া করেও ধরতে পারেনি। সে তাকে খুন করার জন্য পূর্ব পরিকল্পনা করেই এসেছিলো এবং ছুরিটা তার সাথেই ছিলো।”

স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, “খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে এসেছি। হলুদ কালারের টি- শার্ট পড়িহিত এনাম তাকে ছুরিকাঘাত করে বলে স্থানীয়রা জানান। তাকে ধরার জন্য এলাকাবাসী চেষ্টা করেও পারেনি।”

এদিকে এনজিও কর্মী চম্পা চাকমা খুনের বিচার দাবী করে পদক্ষেপের ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মিন্টু চাকমা বলেন, “পূর্ব পরিকল্পিতভাবেই এনাম প্রকাশ্যে সবার সামনে এই ঘটনা ঘটিয়েছে। ঘাতক এনামকে গ্রেফতারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। অন্যথায় জীবনের নিরাপত্তা না থাকলে এনজিও চালাবো কিভাবে।”