রাঙামাটির গাছ-মাটি জ্বলছে ইটভাটায়; হঠাৎ প্রশাসনের হানা

রাঙামাটিতে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে চিহ্নিত প্রভাবশালীরা; ইউএনও’র হস্তক্ষেপে ২ ভাটাকে ৬ লাখ টাকা জরিমানা

রাঙামাটিতে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে চিহ্নিত প্রভাবশালীরা
CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন

আলমগীর মানিক, রাঙামাটি প্রতিনিধি: প্রকাশ্য দিবালোকে রাঙামাটির বিভিন্ন স্থানে পাহাড় কাটার মহোৎসবে মেতে উঠেছে একটি চক্র। ফসলি জমির উপর গড়ে উঠা অবৈধ ইটভাটার কাঁচামাল হিসেবে সুউচ্চ পাহাড়ের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে। সেই মাটি পোড়ানো হচ্ছে বনাঞ্চলের অপরিপক্ক গাছ জ্বালিয়ে। রাঙামাটির একাধিক স্থানে প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে অবাধে পাহাড় কেটে সাবাড় করছে একটি অসাধু চক্র। রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সমিতির নেতার পরিচয়ে অনেকটা প্রকাশ্য দিবালোকেই সাবাড় করা হচ্ছে বড় বড় পাহাড়।

বুধবার (০১ মার্চ) দুপুর ২টায় রাঙামাটির কাউখালী উপজেলার কলমপতি ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের প্রত্যন্ত এলাকার নাম আদর্শগ্রাম। গ্রামটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে জেবিএম ও কেবিএম নামের দুটি বিশাল ইটভাটা। সেখানে গিয়ে দেখা মেলে পাহাড় কেটে আনা কাঠের স্তুপ। পাশেই বিশাল চুল্লিতে ফেলা হচ্ছে এসব কাঠ। দাউ দাউ করে মুহুর্তেই ছাই হওয়া এসব কাঠের আগুনে তৈরি হচ্ছে ইট। আবার এই ইটভাটার পাশেই দেখা গেছে পাহাড় কাটা মাটির স্তুপ। ইট ভাটার অদূরেই প্রাকৃতিক বিশালাকার পাহাড় ষ্ক্যাবেটরের মাধ্যমে কেটে মাটি নিয়ে আসা হচ্ছে ইটভাটায়। জেবিএম ইট ভাটার ম্যানেজার অকপটেই স্বীকার করে বলেন, তারা পাহাড়ের নীচের মাটিগুলো আনছেন ইট তৈরির জন্য।

এদিকে বুধবার বিকেলে বিষয়টি কাউখালী উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দা সাদিয়া নুরীয়া’র দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। প্রতিবেদকের কাছ থেকে তথ্য পেয়েই ঘটনাস্থলে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন ইউএনও।

তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে জানতে পেরে বুধবার সন্ধ্যায় আদর্শগ্রামের জেবিএম ও কেবিএম এই দুইটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করে মোট ৬ লাখ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা খবর পেয়ে উক্ত দুইটি ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করেছি। এসময় কেবিএম ইটভাটায় জ¦ালানী কাঠ ব্যবহারের অপরাধে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা এবং জেবিএম ইটভাটায় পাহাড় কেটে মাটি ব্যবহার ও ফসলি জমির মাটি সরিয়ে গর্ত তৈরির অপরাধে জেবিএম’কে সাড়ে ৪ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

ইউএনও জানান, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন(নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর আওতায় উক্ত ইটাভাটাগুলোতে অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে এবং সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকে লিখিত মুচলেখা নেওয়ার পাশাপাশি মাটি সরিয়ে তৈরিকৃত বড় গর্তটি ভরাট করে দেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এই ধরনের অপরাধ যাতে আর না করা হয় সেই নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।

ইটভাটার মালিক প্রার্থিক বাবু’র সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি মাটি কাটার বিষয়টি এড়িয়ে যান।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি জানিয়েছেন, প্রার্থিক বাবু ইটভাটাগুলোর সভাপতি এবং তিনি এসব ইটভাটার বিষয়ে সকলের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন।

বিষয়টি স্থানীয় পরিবেশের ক্ষতি করছে কিনা এমন প্রশ্ন করলে স্থানীয় ৮নং ওয়ার্ডের মেম্বার মং থুই প্রু মারমা জানিয়েছেন, প্রভাবশালীদের সাথে ঝামেলায় জড়াতে চাইনা তাই এসব নিয়ে কথা বলতে সাহস পাইনা।