রাউজান প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজানে দুর্বৃত্তদের দেওয়া আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে মো. ওয়াসিম নামের এক দরিদ্র চালকের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও তার কুঁড়ে বসতঘর।
শনিবার (৩১ ডিসেম্বর) ভোররাতে রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের চুয়েট সংলগ্ন চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কের দক্ষিণ পার্শ্বে খানপাড়া গ্রামে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. ওয়াসিম খানপাড়া গ্রামের মৃত মো. খায়রুজ্জামানের পুত্র। অগ্নিকাণ্ডের রাতে আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়ায় ঘরে কেউ ছিলেনা বলে জানান।
স্থানীয়রা ঝাঁপিয়ে পড়ে আগুন নিয়ন্ত্রণ আনলে ঘনবসতিপূর্ণ আশেপাশের অনেক ঘর রক্ষা পায়। তবুও আগুনে মো. ওয়াসিমের দুই বছর পূর্বে গ্রামীণ ব্যাংক ও এনজিও সংস্থা আশা হতে ঋণ নিয়ে কেনা সিএনজি চালিত অটোরিকশা (চট্টগ্রাম থ: ১৩-৭৭৯৩) ও দুই কক্ষের টিন ও বাঁশের কুঁড়ে ঘর সম্পূর্ণরূপে পুড়ে যায়। যার আনুমানিক ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ চার লক্ষ টাকা বলে জানান ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার। এই সিএনজি চালিত অটোরিকশা চলিয়ে মো. ওয়াসিম ঋণ শোধের পাশাপাশি পারিবারের ভরনপোষণ নির্বাহ করতেন।
স্ত্রী মিনু আক্তার, দশম শ্রেণি পড়ুয়া বড় মেয়ে ঊর্মি আক্তার, ৭ম শ্রেণী পড়ুয়া রুমি আক্তার, মাদ্রাসায় শিশু শ্রেণীতে পড়ুয়া মহসিন ও ছোট্ট কোলের শিশুর জীবিকা নির্বাহের একমাত্র সম্বল সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও কুঁড়ে বসত পুড়ে মো. ওয়াসিমের পরিবার সম্পূর্ণভাবে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
প্রতিবেশি সাবেক ইউপি সদস্য মো. আইয়ুব খান বলেন, ফজরের আযানের পূর্বে হঠাৎ আগুন দেখে এলাকার সবাই আগুন নিভাতে এগিয়ে আসেন। আগুনে মো. ওয়াসিমের পরিবারের থাকার ঘর ও তার অটোরিকশাও পুড়ে গেছে। কিভাবে আগুন লেগে কেউ বলতে পারে না।
প্রতিবেশি মো. নজরুল ইসলাম নজু বলেন, ভোরে হঠাৎ আওয়াজের শব্দ শুনে ঘুম হতে উঠে দেখি ওয়াসিমের ঘরে আগুন জ্বলছে। বাড়ির পানির পাম্পে পাইপ লাগিয়ে পানি ছিটিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনি। তখন তার ঘরের সব পুড়ে গেছে। এই সিএনজি চালিয়ে সে তার পরিবার চালাত। এখন তার কিছু নেই। সরকারের কাছে ও আমাদের সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর কাছে তার পরিবারের জন্য সহায়তা কামনা করছি।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. ওয়াসিম বলেন, ঘটনার সময় তারা বাড়িতে ছিলেন না। এক আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে গিয়েছিলেন। ঘরে না থাকার সুযোগে কেউ শত্রুতামি করে আগুন দিয়েছে। দুই বছর আগে গ্রামীণ ব্যাংক হতে ২ গ্রামীণ ২ লক্ষ ৩০ টাকা ঋণ নিয়ে গাড়িটি কিনেছি। ছয় মাস পূর্বে এনজিও সংস্থা আশা হতে ৮০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ঘর এবং গাড়িটি মেরামত করি। গাড়ি চালিয়ে অর্ধেক ঋন শোধও করেছি। ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া ও পরিবারের খরচও বহন করেছি। এখন গাড়ি পুড়ে যাওয়ায় আমরা কিভাবে পরিবার চালাব, কিভাবে বাকী ঋণ শোধ করব, কিভাবে ছেলে-মেয়েদের পাড়া লেখার খরচ বহন করব। আমি এখন নিঃস্ব।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ রোকন উদ্দিন বলেন, আমি অগ্নিকাণ্ডের সংবাদ পেয়ে স্থানীয় ইউপি সদস্যকে ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছি। আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কেউ অবগত নন। শত্রুতাবশত কেউ এমনকান্ড ঘটিয়েছে কিনা আমরা যাচাই করছি। তাদের থানায় একটা সাধারণ ডায়েরি করার পরামর্শ দিয়েছি। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারে জন্য মাননীয় সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী ও পাহাড়তলী ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ হতে আমরা সহায়তা প্রদান করব।