মূল্যস্ফীতির হার সাত মাসের মধ্যে সর্বাধিক

সিপ্লাস ডেস্ক: সরকারি হিসাবে গত মাসে দেশে সার্বিকভাবে পণ্য ও সেবার দর বৃদ্ধির হার গত ৭ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হয়েছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, মার্চে পয়েন্ট টু পয়েন্ট ভিত্তিতে মূল্যস্ফীতির হার দাঁড়িয়েছে ৯ দশমিক ৩৩ শতাংশ। আগের মাস ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৮ দশমিক ৭৮ শতাংশ।

রমজান শুরু হওয়ার আগেই জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার যে প্রবণতা দেখা গিয়েছিল, তা এ পরিসংখ্যানে কিছুটা হলেও প্রতিফলিত হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা অবশ্য মনে করেন, নিম্ন আয়ের মানুষ যেসব পণ্য ভোগ করেন, তার মূল্যস্ফীতি সরকারি পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি হবে।

গত বছরের আগস্ট মাসে মূল্যস্ফীতি ৯ দশমিক ৫২ শতাংশে ওঠে, যা চলতি অর্থবছরের ৯ মাসের মধ্যে সর্বাধিক। শুধু তাই নয়, এর আগে অন্তত এক দশকে কোনো মাসে আগস্টের মতো বেশি হারে জিনিসপত্রের দাম বাড়েনি।

গতকাল একনেক বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে মূল্যস্ফীতির হালনাগাদ পরিসংখ্যান জানান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, মার্চে খাদ্যসূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ। আগের মাসে যা ছিল ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ। খাদ্যবহির্ভূত সূচকে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৭ দশমিক ৭২ শতাংশ। আগের মাসে যা ছিল ৭ দশমিক ৮২ শতাংশ।

পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, মূল্যস্ফীতি আগের মাসের চেয়ে মার্চে বেড়েছে। উদ্বেগ ছিল ১০ শতাংশে পৌঁছায় কিনা। কিন্তু তা হয়নি। তবে এর মাঝে সুখবর হলো– মজুরি বৃদ্ধির হারও কিছুটা বেড়েছে। মার্চে এক বছর আগের তুলনায় মজুরি বেড়েছে ৭ দশমিক ১৮ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে যা ছিল ৭ দশমিক ১১ শতাংশ। মজুরি বৃদ্ধি মূল্যস্ফীতির চাপ সামলাতে সামান্য হলেও সহায়ক হবে।

পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম বলেন, মূল্যস্ফীতি আগামীতে বাড়বে কী, বাড়বে না– এখনও তা বলা যাচ্ছে না। কারণ বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে আবার জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধি শুরু করেছে। অন্যদিকে আমাদেরও উৎপাদন ভালো হচ্ছে। বোরো ধানের আবাদ এখন ভালো হচ্ছে।

পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতি হচ্ছে আগের বছরের নির্দিষ্ট কোনো মাসের ভোক্তা মূল্যসূচকের তুলনায় পরের বছর একই মাসে ওই সূচক যতটুকু বাড়ে তার শতকরা হার। অন্যদিকে ১২ মাসের পয়েন্ট টু পয়েন্ট মূল্যস্ফীতির গড় করে গত এক বছরের গড় পরিসংখ্যান বের করা হয়।

গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন মনে করেন, আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য কমে আসার প্রভাব বাংলাদেশের বাজারে পড়ছে না। সুতরাং আন্তর্জাতিক বাজারের কথা বলে দাম বৃদ্ধিকে ব্যাখ্যা করার অবকাশ তেমন নেই। সমকালকে তিনি বলেন, আমদানিকারকরা প্রায়ই যুক্তি দেন যে, তাঁদের আগে বাড়তি দামে কেনা পণ্যের বিক্রি শেষ হয়নি বলে দাম কমাতে পারছেন না। সাম্প্রতিক সময়ের তুলনামূলক কম দামে কেনা পণ্যও তো বাজারে আসছে। আসলে তাঁদের মধ্যে ব্যবসায়িক নৈতিকতা কাজ করে না।

ফাহমিদা খাতুন আরও বলেন, বাজারে চাহিদা ও সরবরাহের ভিত্তিতে দাম নির্ধারিত হওয়ার কথা। কিন্তু বাংলাদেশে অর্থনীতির এ তত্ত্ব যথাযথভাবে কাজ করে না। এর কারণ, বেশকিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রয়েছে, যার আমদানিকারক এবং উৎপাদকদের সংখ্যা কম। তারা নিজেরা জোটবদ্ধ হয়ে অনেক সময় দাম নিয়ন্ত্রণ করে। বাজারে মূল্য নির্ধারণে এক ধরনের কারসাজি হয় বলে তিনি ধারণা করেন।

পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তাহলে করণীয় কী– এমন প্রশ্নের উত্তরে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক বলেন, বাজার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিয়মিত ভিত্তিতে তদারক করতে হবে। দাম নিয়ন্ত্রণের জোটবদ্ধতা ভেঙে দিতে হবে। প্রতিযোগিতা কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে বলে প্রাক্কলন করে সরকার। পরে তা সংশোধন করে সাড়ে ৬ শতাংশ করা হয়। তবে গড় মূল্যস্ফীতি ইতোমধ্যে ৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। বিশ্বব্যাংক গতকাল বাংলাদেশ নিয়ে সংস্থার সর্বশেষ পর্যালোচনায় বলেছে, চলতি অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি ৮ দশমিক ৬ শতাংশ হতে পারে। আইএমএফ এবং এডিবির মতেও মূল্যস্ফীতি সরকারের প্রাক্কলনের চেয়ে বাড়বে।

ক্যালেন্ডার
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
Scroll to Top