মিসরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল সিসির সরকারের বিরুদ্ধে চলমান বিক্ষোভের কারণে প্রায় পাঁচশো মানুষ গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মানবাধিকার কর্মীরা। তাদের আশঙ্কা সামনের দিনগুলোতে গ্রেফতারের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। তবে সরকারের তরফ থেকে গ্রেফতারকৃতদের সংখ্যা এখনও প্রকাশ করা হয়নি। এদিকে বিক্ষোভের আশঙ্কায় বিভিন্ন শহরে নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। তবে তা সত্ত্বেও কায়রো, আলেকজান্দ্রিয়াসহ বেশ কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
২০১৩ সালে সামরিক অভ্যুত্থানে দেশটির ইতিহাসের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ক্ষমতায় আসেন জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল সিসি। অভ্যুত্থানের পর সরকারের অনুমতি ছাড়া দশ জনের বেশি মানুষের জমায়েত আইন করে নিষিদ্ধ করা হয়। সিসি সরকারের বিরুদ্ধে ভিন্ন মতালম্বীদের ওপর ব্যাপক নিপীড়নের অভিযোগ থাকলেও দেশটিতে বিক্ষোভের ঘটনা বিরল। তবে একদিকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি অন্যদিকে সেনাশাসক জেনারেল সিসি ও তার বলয়ের লোকজনের ব্যাপক দুর্নীতি সাধারণ মানুষকে বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে।
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজধানী কায়রোর রাজপথে নেমে আসে হাজার হাজার তরুণ। অনেকেই জড়ো হয় আরব বসন্তের স্মৃতি জাগানো তাহরির স্কয়ারে (২০১১ সালে এই স্কয়ারে লাখ লাখ মানুষের বিক্ষোভের মুখে পদত্যাগে বাধ্য হয়েছিলেন তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হোসনি মোবারক)। কায়রো ছাড়াও বিক্ষোভ হয়েছে আলেকজান্দ্রিয়া, দামিয়েত্তা ও মহল্লা আল কুরবা শহরে। বিক্ষোভকারীরা পুলিশের ছোঁড়া টিয়ারগ্যাসে ছত্রভঙ্গ হওয়ার আগে ‘সিসি হটাও’ বলে স্লোগান দেয়। শনিবার রাতে নিরাপত্তা বাড়ানোর পরও বন্দরনগরী সুয়েজ-এ বিক্ষোভ হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
সোমবার স্থানীয় একটি মানবাধিকার গ্রুপ জানিয়েছে, বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার পর হারিয়ে যাওয়া স্বজনদের কাছ থেকে টেলিফোন পাচ্ছেন তারা। এক আইনজীবী বিবিসিকে জানিয়েছেন তার বিশ্বাস প্রায় ৫০০ মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সামনের দিনগুলোতে এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি। বেসরকারি সংস্থা ইজিপিশিয়ান সেন্টার ফর ইকোনোমিক অ্যান্ড সোস্যাল রাইটস জানিয়েছে, গ্রেফতোরের সংখ্যা ৫১৬তে পৌঁছেছে।
আটককৃতদের বিরুদ্ধে বেআইনি গ্রুপের সদস্য হওয়া, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিথ্যা খবর ছড়ানো, এবং অনুমতি ছাড়া বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত অনেকেরই বয়স ১৮ বছরের নিচে বলে জানা গেছে।
আটককৃতদের মধ্যে রয়েছে প্রখ্যাত মানবাধিকার আইনজীবী মাহিনুর আল মাসরি রয়েছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবী। বার্তা সংস্থা এফপিকে আইনজীবী তারেক আল আওয়াদি বলেছেন, রবিবার কায়রোর প্রসিকিউটর কার্যালয়ের বাইরে হাটার সময়ে তাকে আটক করা হয়। তিনি বিক্ষোভ সংশ্লিষ্টতার দায়ে আটক কয়েকজনের প্রতিনিধিত্ব করছিলেন বলে জানান তার আইনজীবী।
জেনারেল সিসির শাসনামলে গত ছয় বছরে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ আটক হয়েছেন। এদের বেশিরভাগই বর্তমানে নিষিদ্ধ ঘোষিত সাবেক প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসির রাজনৈতিক দল মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, গ্রেফতার হওয়া ছাড়াও অনেককেই গুম করে ফেলা হয়েছে।