“ভাতের বিনিময়ে” পড়াতে চায় পঙ্গু ফারুক, ছেড়ে গেছে স্ত্রীও

নিজস্ব প্রতিবেদক: শহরের অলিগলিতে মোড়ে মোড়ে প্রায় সময় টিউশন, চাকরি, বাসা ভাড়াসহ বিভিন্ন ধরণের বিজ্ঞাপন চোঁখে পড়ে। এমন হাজারো বিজ্ঞাপনের ভিড়ে নগরীর আন্দরকিল্লা মোড়ে একটা ব্যতিক্রমী বিজ্ঞাপন নজর কেড়েছে সবার। যেখানে লেখা আছে “ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চাই।”

জানা যায়, বিজ্ঞাপনদাতা চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার মোঃ ফারুক সম্প্রতি মোটর সাইকেল দুর্ঘটনায় তার শারীরিক সক্ষমতা হারান। একটি পা অনেকটা নষ্ট হওয়ার পথে। আর মুখে গুরুতর আঘাত পাওয়ায় রুদ্ধ হয়েছে কণ্ঠনালি। বড় আওয়াজে কথা বলতে পারেন না। কোনরকম ছোট করে কথা বলে মনের ভাব প্রকাশ করেন তিনি। এই ঘটনার পরই মূলত ফারুকের জীবনে নেমে আসে অন্ধকার। কিন্তু জীবনের কাছে হার মানেনি এই যুবক। কারো করুণার পাত্র না হয়ে দুই বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়িয়ে সে জীবিকা নিবার্হ করতে চাই।

লোহাগাড়া থানাধীন আধুনগর ফাযিল মাদ্রাসা থেকে আলিম পাস করেন ফারুক। কিন্তু আর্থিক অনটনে এরপর আর পড়া হয়নি তার। পিতৃহীন ফারুক তার জীবনে একটি বিয়েও করেছিলেন। তার বৈবাহিক জীবনে ছিল দুই মেয়ে। কিন্তু দুর্ঘটনার শিকার পঙ্গুপ্রায় ফারুকের সাথে বাকি জীবন কাটাতে অস্বীকৃতি জানায় তার স্ত্রী। ফলে ভেঙ্গে যায় তার ১০ বছরের সংসার। বিয়ে করে অন্যত্র চলে যায় তার স্ত্রী। বর্তমানে তার এক মেয়ে তার গ্রামের বাড়িতে আছে এবং আরেক মেয়ে থাকছেন তার সাবেক স্ত্রীর সাথে।

সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব ফারুক পাড়ি জমায় অচেনা, অপরিচিত শহরে। বন্ধুর সহযোগিতায় সম্প্রতি স্বল্প বেতনে একটি বাড়িতে কেয়ার টেকারের কাজ করছেন তিনি। কিন্তু সেখানে ভাত নিয়ে আছে বিড়ম্বনায়। তাই ভাত খাওয়ার খরচ বাঁচানোর জন্য তিনি একটা বাড়ির দেওয়ালে লাগিয়েছেন এমন বিজ্ঞাপন। যাতে অন্তত ভাত খাওয়ার জন্য তার দুশ্চিন্তা করতে না হয়।

বিজ্ঞাপন দেওয়ার পরে এর মধ্যে বেশ কয়েকটি টিউশনের প্রস্তাব আসলেও দূরত্বের কারণে তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেছেন। কারণ তিনি হাঁটতে পারেন নাহ ভালো মত। হেঁটে কোন রকম পাশ্ববর্তী মসজিতে যান নামাজ আদায় করতে। চেয়ারে বসেই নামাজ পড়েন তিনি। মূলত তার আবাসস্থলের নিকটবর্তী জায়গায় দুই বেলা ভাতের বিনিময়ে পড়াতে চেয়েছিলেন তিনি।

টাকার অভাবে সুচিকিৎসা না পেয়ে বর্তমানে পুরোপুরি পঙ্গু হওয়ার পথে এই যুবক। উন্নত চিকিৎসা পেলে পঙ্গুত্বের জীবন থেকে ফারুক হয়ত স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। কিন্তু এখন সেই স্বপ্ন আর দেখেন না তিনি। কারো প্রতি অভিযোগও নেই তার। তিনি জানান, একসময় সাহায্যের জন্য সবার দুয়ারে দুয়ারে গিয়ে মিলেনি কারো সহযোগিতা।

ফারুকের কাছে ভাতের কষ্টের কারণ জানতে গিয়ে দেখা যায়; শুধু ভাত নয়, সে তার জীবন নিয়েও কষ্টে আছে। পঙ্গুত্ব যেন তার জীবনকে পুরাপুরিভাবে শেষ করে দিয়েছে। সমাজের বিত্তবান এবং সচেতন মানুষরা যদি তার পাশে দাঁড়ায় তাহলে ফারুক হয়ত নতুন জীবন ফিরে পেতে পারে।

ক্যালেন্ডার
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
Scroll to Top