বোনকে শ্লীলতাহানি থেকে বাঁচাতে বুক পেতে দিল ভাই!

ছবি: সংগৃহীত
CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন

নিজস্ব প্রতিনিধি: কক্সবাজার শহরের সমিতি পাড়ায় মামার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন নাফিজা আক্তার রিনা (১৪) নামের এক তরুণী। দুইদিন পর ভাইয়ের সাথে বাড়ি ফিরছিলেন সে। আর তাকে ঘিরেছিল কয়েক বখাটে যুবক। দূর থেকে বোনকে দেখে এগিয়ে গেল ভাই আব্দুল মোনাফ। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে বোনকে তাড়াতাড়ি চলে যেতে বলে তিনি। এ সময় বখাটে জামাল, রায়হান ও আরমান তরুণীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে। প্রতিবাদ করলে বেধড়ক পিটিয়ে মোনাফকে জখম করে।

গত ৩১ মে সন্ধ্যায় কক্সবাজার সদরের খুরুশকুলের আশ্রয়ন প্রকল্প সংলঘ্ন মনুপাড়া বেড়িবাঁধ এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

শনিবার (১১ জুন) রাতে বোনের ইজ্জত রক্ষা ভাইয়ের প্রাণপণ চেষ্টা এবং বেধড়ক মার খাওয়ার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এরপরই নড়েচড়ে বসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ভিডিওতে দেখা যায়, বোরকাপড়া এক তরুণীকে এক যুবক বুকে আগলে রেখেছেন। গালাগাল দিতে দিতে কয়েকজন বখাটে গাছের ডাল নিয়ে তাদের উপর্যুপরি মারতে থাকে। মারতে মারতে ডাল ভেঙ্গে গেলে লাথি, কিল ও ঘুষি মারতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বখাটেরা চলে যায়।

ঘটনায় ভুক্তভোগী আব্দুল মোনাফ বলেন, ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঝিনুক বিল্ডিংয়ে আমরা থাকি। সেখান থেকে আমার বোন মামার বাড়ি শহরের সমিতি পাড়ায় বেড়াতে গিয়েছিলেন। ৩১ মে বোন বাড়ি ফেরার পথে খুরুশকুল মনুপাড়ার আরমান, জামাল ও রায়হানসহ ৬/৭ জন আমার বোনকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করে।

তারা এসময় বোনের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দেয়। ‘পরে আমার বোন কয়েকবার ফিরে আসতে চাইলে তারা বার বার পথ আটকাচ্ছিল। আমি কিছুটা দুর থেকে এসব দেখে দৌড়ে আসি। জিজ্ঞেস করার সঙ্গে সঙ্গে তারা আমার বোনকে লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তখন আমি বোনকে জড়িয়ে ধরি। এসময় তার গায়ে কেন হাত দিয়েছে জানতে চাইলে তারা আমাকেও মারধর শুরু করে।’

মোনাফের অভিযোগ, সেদিন আহত হয়ে তিনি হাসপাতালে যান। কিন্তু বোনের সম্ভ্রম রক্ষায় বিষয়টি গোপন করে একটি ছিনতাইয়ের অভিযোগ দেন থানায়। পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি। এরপর থেকে বখাটেরা মোনাফকে উপর্যুপরি হুমকি দিয়ে আসছে। তবে, ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর তারা সবাই এখন গা-ঢাকা দিয়েছে। বর্তমানে তার পরিবার চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে দাবী মোনাফের।

হামলার বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ব্যক্তি বলেন, ‘এলাকার আরমানসহ কয়েকজন বখাটে এলাকার বিভিন্ন মেয়েকে উত্ত্যক্ত করত। বখাটেদের ভয়ে একা একা ওই এলাকার মেয়েরা ঘরের বাইরে যেতে পারত না। কয়েক দিন আগে রাতে এক প্রতিবেশীর ঘরে ঢুকে পড়ে ওই চার বখাটে। পরে স্থানীয়রা এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। মোনাফ তার বোনের জন্য প্রতিবাদ করায় তার উপর হামলা চালায় বখাটেরা।’

তবে পুলিশ বলছে ভিন্ন কথা। কক্সবাজার সদর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. সেলিম উদ্দিন বলেন, ভুক্তভোগী মোনাফ সেদিন পুরো ঘটনা গোপন করে শুধুমাত্র মোবাইল ছিনতাইয়ের একটা অভিযোগ দেন। এ কারণে পুলিশ তাৎক্ষণিক আসল ঘটনা জানতে পারিনি। গতকাল ভাইরাল ভিডিওর সাথে অভিযোগের কোন মিল নাই।

তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওটা দেখে গতরাতে অভিযুক্ত খুরুশকুল মনুপাড়া এলাকা নুরুল আলমের ছেলে রায়হান (২০) ও কুলিয়া পাড়া এলাকার নুরুন্নবীর ছেলে আরমানকে (২০) আটক করেছে পুলিশ। তাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট আইনে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

সেলিম উদ্দিন আরও বলেন, ভাই বোন হিসেবে ভিডিও প্রচার হলেও মূলত তারা ভাই বোন নয়। হয়তো তাদের দুইজনের মধ্যে অন্য কোন সম্পর্ক থাকতে পারে।

পুলিশের এ কর্মকর্তার দাবি, আটকৃতরা পুলিশের কাছে দাবি করেছে, তারা ভাই বোন নয়, ওইদিন তারা উভয়ে বেড়িবাঁধের আড়ালে গিয়ে খারাপ কাজে লিপ্ত হতে দেখে অভিযুক্তরা বাধা প্রদান করে। যা এক পর্যায়ে মারামারিতে পর্যন্ত গড়ায়। যদিও এখন তারা ভাইবোন হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে।