সিপ্লাস ডেস্ক: কিডনি বিকল হয়ে প্রায় তিন বছর আগে মৃত্যুবরণ করেন বাবা সোবহান মিয়া (৩৮)। শুক্রবার বিষপানে আত্মহত্যা করেন মা আমেনা খাতুন (৩৩) ও বড় মেয়ে মরিয়ম (১০)।
সোবহান-আমেনা দম্পতির বেঁচে থাকা একমাত্র শিশু ফাতেমার (৫) অসহায় অবস্থায় দাদার বাড়িতে নানির তত্ত্বাবধানে লালন-পালন চলছিল। খবর পেয়ে ওই শিশু ফাতেমার দায়িত্ব নেন ময়মনসিংহের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. মোস্তাফিজার রহমান।
ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার বালিপাড়া ইউনিয়নের ধলা গ্রামে।
জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বুধবার বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান।
সোবহান-আমেনা দম্পতির পরিবার সূত্র জানায়, প্রায় তিন বছর আগে কিডনি বিকল হয়ে মৃত্যুবরণ করেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী অভিভাবক সোবহান মিয়া। তার মৃত্যুর পর থেকে অভাব-অনটনের সংসারের গ্লানি টানতে গিয়ে কাজ নেন গার্মেন্টসে। দুই সন্তানের দেখভালের সুবিধার জন্য চাকরি ছেড়ে দেন সেখান থেকে।
পরে স্থানীয় এক ব্যবসায়ীর বাড়িতে ঝিয়ের কাজ নেন আমেনা। দুই মেয়ে মরিয়ম ও ফাতেমাকে নিয়ে কোনো প্রকার খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছিলেন তিনি। অভাব-অনটন নিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন আমেনা।
এরই মধ্যে গত শুক্রবার রাতে নিজ ঘরের দরজা বন্ধ করে তার দুই মেয়েসহ নিজেও বিষপান করেন। কিছুক্ষণ পর পাঁচ বছরের শিশু ফাতেমা মায়ের অস্বস্তি দেখে ভিতর থেকে দরজা খুলে দেয়। এ সময় প্রতিবেশীরা জানতে পেরে রাতেই গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে মারা যান আমেনা খাতুন। শিশু মরিয়মকে (১০) গফরগাঁও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যায়।
মা-বাবা, বোনকে হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়ে শিশু ফাতেমা। বাকরুদ্ধ হয়ে এদিকে ওদিকে তাকিয়ে যেন কাকে বারবার খুঁজতে থাকে।
বিষয়টি ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমানের নজরে আসলে বুধবার ত্রিশাল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামানকে খোঁজখবর নিতে নির্দেশনা দেন তিনি। বিকালে ইউএনও মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান শিশু ফাতেমার বাড়িতে খোঁজখবর নেন ও শিশু ফাতেমার আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেন।
বুধবার বিকালে শিশু ফাতেমা ও তার নানি আসেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে। এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান শিশু ফাতেমা ও নানির হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন। এছাড়াও সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় বিষয়গুলো নোট করে জেলা প্রশাসককে অবহিত করেন।
শিশু ফাতেমার দাদা শারাফত মিয়া জানান, অল্প কিছু দিনের ব্যবধানে আমার ছেলে, ছেলের বউ ও বড় নাতিকে হারিয়ে আমি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েছি। উপার্জনক্ষম ছেলেকে হারিয়ে এই বয়সে এসে আমার নাতনির ভরণপোষণ করা আমার জন্য কঠিন হয়ে পড়েছিল।
বিষপানে আত্মহত্যার ঘটনায় ত্রিশাল থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে বলে জানান ত্রিশাল থানার অফিসার ইনচার্জ মাইন উদ্দিন। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিহতের ঘর থেকে বিষের একটি প্যাকেট উদ্ধার করেছে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলছে বলেও জানান তিনি।
উপজেলার নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আক্তারুজ্জামান বলেন, জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান স্যারের নির্দেশে শিশু ফাতেমার বাড়িতে গিয়ে তার সার্বিক খোঁজ নিয়েছি। শিশু ফাতেমার নানি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের যৌথ সাক্ষরে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলা হবে। প্রাথমিকভাবে শিশু ফাতেমার প্রয়োজনীয় কিছু খাদ্যসামগ্রী তার হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। শিশুটির ভরণপোষণের সার্বিক দায়িত্ব নিয়েছেন জেলা প্রশাসক মোস্তাফিজার রহমান।