কাপ্তাই প্রতিনিধি: তথ্যপ্রযুক্তির এ যুগে বিজ্ঞানের যে চরম উৎকর্ষ তথা মানবজীবনের জীবনমানের যে উন্নয়ন; এ সবকিছুর মূলে রয়েছে শিক্ষা। যদিও একটি মানবশিশুর জীবনের প্রথম শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হলো তার পরিবার তবুও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ছাড়া আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার গ্রহণযোগ্যতা নেই বললেই চলে। বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে এই প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ নৌবাহিনী পরিচালিত প্রতিষ্ঠান নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ কাপ্তাই কাজ করে যাচ্ছে।
প্রতিষ্ঠানটি ১৯৮৩ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করেছিল। তারপর নানা প্রতিকূলতা পার করে ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে রূপ লাভ করে। উত্তরোত্তর সফলতা অর্জনের মধ্য দিয়ে ২০১০ সালে প্রথমবারের মতো এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে এটি একটি পূর্ণাঙ্গ মাধ্যমিক বিদ্যালয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। এ প্রতিষ্ঠানটিকে এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। এই স্কুলটি ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষ থেকে কলেজ কার্যক্রমের নবযাত্রা শুরু করে সফলতার সাথে পাঠদান চালিয়ে যাচ্ছে। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটি তিন পার্বত্য জেলায় একটি শ্রেষ্ঠ ও আদর্শ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে নিজস্ব স্থান অর্জন করে নিয়েছে।
“শুধু ভালো ফলাফল নয়, ভালো মানুষ গড়াই আমাদের লক্ষ্য” এই মূলমন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে জাতীয় শিক্ষানীতি অনুসরণের পাশাপাশি পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে নানা সহশিক্ষামূলক কার্যক্রম নিয়ে এ প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে চলেছে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সুশিক্ষা প্রদান করে আদর্শ নাগরিক ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে মূল্যবোধসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে এই প্রতিষ্ঠান অবিরাম কাজ করে যাচ্ছে।
এ প্রতিষ্ঠানে সুশৃঙ্খল, নিরাপদ, ধূমপান ও রাজনীতিমুক্ত মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে; আধুনিক উপকরণসমৃদ্ধ বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ল্যাব, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম ও মেধাবী, পরিশ্রমী, অভিজ্ঞ শিক্ষকমণ্ডলীর সমন্বয়ে নিয়মিত পাঠদান পরিচালিত হচ্ছে।
এছাড়া শিক্ষার্থীদের ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য প্রতিষ্ঠান পরিচালকবৃন্দ শিক্ষকমণ্ডলীর সমন্বয়ে পরিচালনা করে যাচ্ছেন ক্লাস বেসড লার্নিং মেথড; যার অন্তর্ভুক্ত একটি কার্যক্রম হলো গুচ্ছক্লাস পাঠদান পদ্ধতি। আরও রয়েছে শ্রেণি অভীক্ষা, স্পট টেস্ট, কুইজ টেস্ট, রোটেশন টেস্ট এবং অবকাশকালীন পরীক্ষা। শিক্ষার্থীদের নিয়মিত পড়াশোনা ও পড়াশোনার পরিবেশ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে অধ্যক্ষ ও উপাধ্যক্ষসহ শিক্ষকমণ্ডলী কর্তৃক পরিচালিত হয় ‘হোম ভিজিট’ কার্যক্রম।
এলাকাভিত্তিক প্রতিটি শিক্ষার্থীর বাসায় গিয়ে তাদের অভিভাবকদের সাথে সাক্ষাতের মাধ্যমে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নেয়া হয়। করোনা মহামারির সময়ে যখন থমকে গিয়েছিল পুরো বিশ্ব এবং স্থবির হয়ে গিয়েছিল শিক্ষা কার্যক্রম তখনও এ প্রতিষ্ঠান নিজস্ব উদ্যোগে অনলাইন প্লাটফর্মে নিয়মিত ক্লাস পরিচালনার মধ্য দিয়ে পড়াশোনা অব্যাহত রেখেছিল।
কাপ্তাই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মুনতাসির জাহান একজন অভিভাবক হিসেবে এ কলেজটির প্রশংসা করে বলেন, “এ কলেজটির নিয়মানুবর্তিতা, পাঠদান পদ্ধতি চমৎকার এবং ফলাফলও সন্তোষজনক। আমি এ প্রতিষ্ঠানের সফলতা কামনা করছি।”
কলেজের উপাধ্যক্ষ জনাব জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “আমরা এ প্রতিষ্ঠানটির উন্নয়নে নিরলস কাজ করে যাচ্ছি। সম্প্রতি প্রকাশিত এসএসসি পরীক্ষায় ৮৪ জন পরীক্ষার্থী অংশ নিয়ে ৬৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ফাইভ অর্জন করে কলেজের সুনাম অক্ষুণ্ন রেখেছে। আমরা শুধু তিন পার্বত্য জেলায় নয়, বরং পুরো চট্টগ্রামে একটি সম্মানজনক স্থান অর্জনের লক্ষ্যে কাজ করে যাব।”
কলেজের অধ্যক্ষ কমান্ডার মাহবুব আহমদ শাহজালাল বলেন, “বিগত ৫ বছর ধরে এ প্রতিষ্ঠানটি তিন পার্বত্য জেলায় সেরা হওয়ার গৌরব অর্জন করে আসছে। আমরা প্রতিনিয়ত প্রতিষ্ঠানটিকে নিয়ে ভাবছি এবং বিগত ফলাফলের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি একে একটি ঈর্ষণীয় অবস্থানে পৌঁছনোর সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করে যাব।”
এই কলেজ এর শিক্ষার্থী অদ্রিজা ধর, মেসিং মারমা, অর্নিবান দত্ত জানান, এই প্রতিষ্ঠানে ক্লাসের কাজ ক্লাসেই সম্পন্ন করা হয়। এইছাড়া সহ শিক্ষা কার্যক্রম হিসাবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া, বির্তক, চিত্রাংকন ও রচনা প্রতিযোগিতা আয়োজন থাকে বছর ধরে।