নিরুদ্দেশ আড়াই বছর পর পাওনাদারদের শয়ন কক্ষ মিলল মরদেহ

রাউজান প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের রাউজানে নিরুদ্দেশের আড়াই বছর পর বাড়ির পাশে পাওনাদারের বাড়ির শয়ন কক্ষ হতে খাটের উপর হতে কাজী দিদারুল আলম(৫২) নামের এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করেছেন রাউজান থানার পুলিশ। নিহতের স্বজনরা দাবী করেছেন পাওনাদাররা তাকে অপহরণ করে পাঁচদিন ঘরে বন্দি করে রেখে নির্যাতন করে হত্যা করেছেন।

মঙ্গলবার (১৬ মে) বিকাল ৩ টার দিকে রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের মোকামীপাড়া গ্রামের মৃত সায়ের আহমেদের পুত্র মো. ইউনুসের শয়ন কক্ষ হতে এই মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

নিহত কাজী দিদারুল আলম একই গ্রামের কাজী বাড়ির কাজী শামশুল আলমের ছেলে।

নিহতের পরিবারের সূত্রে জানা যায়, কাজী দিদারুল আলম দীর্ঘ সময় প্রবাসে ছিলেন। গত সাতবছর পূর্বে দেশে ফিরে শহরে বিভিন্ন ব্যবসা করেন। এই সময় বেশ কয়েকজনের কাছ হতে চড়া সুদে ধার-দেনা করেন। ঋণদাতাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন প্রতিবেশী মৃত সায়ের আহমেদের ছেলে ইউনুস ড্রাইভার, মৃত নুরুল আমিনের ছেলে মো. ইদ্রিস ও কামাল মাঝি প্রমুখ। নিহত কাজী দিদারুল আলম একপর্যায়ে ব্যবসায়ে লোকসানে পতিত হলে চক্রবৃদ্ধি সুদের কারণে দেনার পরিমাণ বেড়ে যায়। এতে করে ঋণদাতা/পাওনাদাররা টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন। চাপের কারণে বিগত ২০২০ সালের নভেম্বরের দিকে পরিবার নিয়ে কাজী দিদারুল আলম নিরুদ্দেশ হয়ে যান। দীর্ঘ আড়াই বছর পর মঙ্গলবার (১৬ মে) বাড়ির সন্নিকটে পাওনাদার মোহাম্মদ ইউনুসের শয়ন কক্ষ হতে পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করেন। তার আগেই গত শনিবার কাজী দিদারুল আলমকে পাওনাদার একাট্টা হয়ে অপহরণ করে বাড়িতে নিয়ে বন্দি করে রেখে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ করেন নিহতের স্বজনরা।

নোয়াপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ উপপরিদর্শক জয়নাল আবেদীন বলেন, আজ (মঙ্গলবার) বেলা তিনটা দিকে সংবাদ পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে জনৈক মো. ইউনুসের সেমিপাকা ঘরের একটি শয়ন কক্ষে খাটের উপর গলায় লুঙ্গি পেছানো অবস্থায় কাজী দিদারুল আলম নামের একজনের মরদেহ উদ্ধার করি।

নিহত ছোট ভাই কাজী ওয়াহিদুল আলম হত্যার অভিযোগ এনে বলেন, আমার ভাই পাওনাদারের চাপে ২০২০ সালের শেষে দিকে নিরুদ্দেশ হয়ে যায়। পরে পাওনাররা আমাদের বাড়িতে এসে নানান রকম হুমকি-ধমকি দিয়ে একেকসময় একেক অংকের টাকা পাবে বলে দাবী করেন। টাকার প্রকৃত অংক কত তা তারা নির্দিষ্ট করেও বলেন নি। পরে তারা আদালতে আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলাও করেন। তাছাড়াও আমাদের আর্থিক অবস্থাও তেমন ভাল নয়। গত শনিবার তার সংঘবদ্ধ হয়ে আমার ভাইকে অপহরণ করে ইউনুস ড্রাইভারের বাড়িতে এনে বন্দি করে রাখেন। শনিবার রাতে সামহলদার পাড়ার মোহরম আলী, ছামিদর খোয়াং এলাকার মো. আলম আমাদের বাড়িতে এসে বলেন দিদারুল আলমকে আমরা আটক করে নিয়ে এসেছি।  তোমরা টাকা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়ে যাও। তখন আমার বাবা তাদের বললেন আমাদের তেমন সামর্থ্য নেই। আপনারা তাকে পুলিশকে হাতে সোপর্দ করুন। আইনে যা হয় তা হবে। পরে তারা পুলিশ সোপর্দ না করে নির্যাতন করে আমার ভাইকে হত্যা করেছেন। আমরা এই হত্যাকান্ডের বিচার চাই।

ঘটনা সংঘটিত মো. ইউনুসের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানা হতে প্রায় পাঁচ ফুট উপরে সিলিং ফ্যানে লুঙ্গির একটি অংশ ঝুলে আছে, আরেকটা অংশ নিহত কাজী দিদারুল আলমের গলায় পেছানো। বিছানা পাশে একটি চেয়ারের উপর বেশ কয়েকট সিগারেটের প্যাকেট পড়ে আছে।  বাড়িতে ইউনুসের স্ত্রী শামসুর নাহার ছাড়া কাউকে পাওয়া যায় নি। তিনি বলেন, শনিবার তার স্বামী ইউনুস সহ কয়েকজন তাকে লুকিয়ে থাকা অবস্থায় ধরে নিয়ে আসেন। কেন ধরে এনেছে তা জানি না। আমাদের পাশের রুমে থাকতেন। একসাথে খাওয়া-দাওয়াও করতেন। আজ সকালে কয়েকবার চা-নাস্তা খেয়েছিলেন। দুপুরের ভাত খাওয়ার জন্য ডাকতে গেলে দেখি দরজা বন্ধ, কোন সাড়াশব্দ নেই। পরে আমার স্বামীকে বাইর হতে ফোন করে ডেকে এনে দরজার হুক ভেঙ্গে ঘরে প্রবেশ করে দেখি তিনি সিলিং ফ্যানের সাথে ঝুলে আছেন। তাড়াতাড়ি লুঙ্গি কেটে নামিয়ে নিয়। এরপর হতে আমার স্বামী কোথায় গেছেন তা জানি না। মোবাইলও বন্ধ।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল হারুন জানান, আমরা মরদেহ উদ্ধার করেছি। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে প্রেরণ করা হবে। এই বিষয়ে নিহতের পরিবারের পক্ষ হতে মামলার প্রক্রিয়া চলছে। পরবর্তীতে তদন্তের সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিহত কাজী দিদারুল আলম একই গ্রামের কাজী শামসুল আলমের আট ছেলে ও তিন বোনের মধ্যে বড় ছেলে। তিনি একসময় কাতার, দুবাই ও ওমানের প্রবাস জীবন কাটিয়ে গত ৭বছর পূর্বে দেশে ফিরেন।  এক ছেলে আর স্ত্রী রয়েছে তাঁর।

ক্যালেন্ডার
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২১৩১৪১৫১৬
১৭১৮১৯২০২১২২২৩
২৪২৫২৬২৭২৮২৯৩০
Scroll to Top