সিপ্লাস ডেস্ক: বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা যেন ব্যাট হাতে রান করতেই ভুলে গেছেন। ফরম্যাট বদলাচ্ছে, পোশাক বদলাচ্ছে- তবুও ব্যর্থতার বৃত্ত ভাঙতে পারছেন না টাইগার ব্যাটসম্যানরা। টেস্ট হোক বা টি-টোয়েন্টি, প্রতিটি ম্যাচের পরেই ব্যাটিং ব্যর্থতাকে কাঠগড়ায় তোলা হচ্ছে। একের পর এক ভুল শটস, ইনিংস বড় করতে না পারার আক্ষেপের সঙ্গে প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন জমা হচ্ছে। তবুও এর উত্তর নেই, সমাধান নেই কোনো।
আরো একবার ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতার দায় চোকাতে হলো বাংলাদেশ দলকে। যদিও এদিন ব্যাটসম্যানদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ‘খারাপ’ করার প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন বোলাররাও। ডোমিনিকায় দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে রভম্যান পাওয়েলের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে স্কোর বোর্ডে ১৯৩ রানের পাহাড় জমা করে ক্যারিবীয়রা। ১৯৪ রানের লক্ষ্য টপকাতে নেমে ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ১৫৮ রানের বেশি তুলতে পারেনি টাইগাররা। এতে ৩৫ রানে হারতে হয়েছে বাংলাদেশ দলকে।
এত কিছু অপ্রাপ্তির মাঝে একমাত্র প্রাপ্তি বাংলাদেশের গর্ব সাকিব আল হাসান এর বড় রেকর্ড। রেকর্ড নয় শুধু, বিশ্বরেকর্ড। রোববার ডমিনিকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে এই ফরম্যাটে ২ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব।
টি-টোয়েন্টিতে ১০০ উইকেটের ক্লাবে তো ঢুকেছেন আরও আগে। এবার ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে এই ফরম্যাটে ২ হাজার রান এবং ১০০ উইকেট নেওয়ার কীর্তি দেখিয়েছেন তিনি।
দলকে জেতাতে পারেননি। তবে সাকিবের ব্যাটেই ম্যাচে যা একটু লড়াই করেছে বাংলাদেশ। ইনিংসের ১৯তম ওভারে ওবেদ ম্যাকয়কে ছক্কা হাঁকিয়ে দুই হাজার রানে পা রাখেন সাকিব। শেষ পর্যন্ত তিনি অপরাজিত থাকেন ৫২ বলে ৬৮ রানে।
এর আগে বল হাতেও একটি উইকেট নেন সাকিব। সবমিলিয়ে ৯৮ টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারের নামের পাশে এখন ২০০৫ রান, উইকেট ১২০টি।
এর আগে ১০০ উইকেট এবং ১ হাজার রানের ‘ডাবল’ গড়া ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটারও ছিলেন সাকিব। ক্যারিয়ারটা বড় হলে পরের রেকর্ডটাও বোধ হয় তারই হবে!
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ব্রেন্ডন কিংয়ের হাফ সেঞ্চুরি ও রভম্যান পাওয়েলের ২৮ বলে ৬১ রানের ঝড়ো ইনিংসে ৫ উইকেটে ১৯৩ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ২২ গজে সাইক্লোন বইয়ে দেওয়া পাওয়েল বাংলাদেশের বোলারদের কোণঠাসা করে ফেলেন। জবাবে বরাবরের মতোই ব্যর্থ বাংলাদেশের টপ অর্ডার। সাকিব আল হাসানের দারুণ লড়াইয়ের পরও ৬ উইকেটে ১৫৮ রানে থামে বাংলাদেশের ইনিংস।
২৩ রানে ৩ উইকেট হারানো দলকে জয়ের পথে রাখার দাঁয়িত্ব কাঁধে তুলে নেন সাকিব আল হাসান ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। দ্রুততার সঙ্গে উইকেটে নিজেদের মানিয়ে নিয়ে জুটি গড়ে তোলেন তারা। ছন্দময় ব্যাটিংয়েই এগোচ্ছিলেন তারা। কিন্তু ১১তম ওভারে গিয়ে বাধে বিপত্তি, ভাঙে ৫৫ রানের জুটি। দারুণ খেলতে থাকা আফিফ স্কুপ শট খেলতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন। এর আগে ২৭ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করেন তিনি।
নতুন ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান উইকেটে গিয়ে প্রয়োজনীয় হারে রান তোলার সঙ্গে তাল মেলাতে পারেননি, সাকিবও দেখেশুনে খেলতে শুরু করেন। তাতে জয়ের পথ কঠিন হয়ে পড়তে থাকে বাংলাদেশের। এর মাঝেই বিদায় নেন ১৩ বলে ৭ রান করা সোহান। দীর্ঘদিন পর সুযোগ পাওয়া মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নিয়ে লড়াই শুরু করেন সাকিব।
যদিও সেই লড়াই ছিল হারের ব্যবধান কমানোর। সাকিব-মোসাদ্দেক কেউই সেভাবে শট খেলার চেষ্টা করেননি। প্রয়োজনীয় রান তোলার হার অনেক বেশি হয়ে পড়লেও ওয়ানডে স্টাইলে খেলে যেত থাকেন তারা। ২৪ বলে গিয়ে বাংলাদেশের প্রয়োজন দাঁড়ায় ৮৮ রান, যা তোলা সাত সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার মতো। শেষ দিকে গিয়ে সাকিব চার-ছক্কার ফুলঝুরি সাজালেও ৩৫ রানের ব্যবধান থেকে যায়। সাকিব-মোসাদ্দেক জুটি থেকে আসে ৫৩ রান।
পরিত্যক্ত হওয়া প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ঝড়ো গতিতে ২৯ রান করা সাকিব এই ম্যাচেও সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন। বাঁহাতি অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান ৫২ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৬৮ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন। টি-টোয়েন্টিতে এটা তার দশম হাফ সেঞ্চুরি।
হার না মানা ইনিংসটি দিয়ে বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে দুই হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন সাকিব। মোসাদ্দেক করেন ১৫ রান। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ওবেদ ম্যাককয় ও রোমারিও শেফার্ড ২টি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান ওডেন স্মিথ ও আকিল হোসেন।
এর আগে দাপুটে শুরু করা ক্যারিবীয়রা উদ্বোধনী জুটি থেকে বেশি রান পায়নি। তেড়েফুঁড়ে ব্যাটিং করতে থাকা কাইল মেয়ার্স দলীয় ১৮ রানে বিদায় নেন। শেখ মেহেদি হাসানের বলে আউট হওয়ার আগে ৯ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৭ রান করেন বাঁহাতি এই ওপেনার। তাসকিনের করা প্রথম ওভার থেকে ১২ রান তোলেন মেয়ার্স।
মেয়ার্সের বিদায়ের পর উইকেটে যাওয়া শামরাহ ব্রুকস সুবিধা করতে পারেননি। ৩ বল খেললেও রানের খাতা খুলতে পারেননি তিনি। সাকিবের বলে মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের হাতে ক্যাচ তুলে সাজঘরে ফেরেন তিনি। এরপর কিংয়ের সঙ্গে যোগ দিয়ে দ্রুতই উইকেট মানিয়ে নেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক পুরান। তৃতীয় উইকেটে ৭৪ রান যোগ করেন কিং-পুরান।
দলীয় ১০০ রানের মাথায় পুরানকে ফেরানে মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। ৩০ বলে ৩টি চার ও একটি ছক্কায় ৩৪ রান করেন পুরান। স্বাগতিকদের অধিনায়ককে ফিরিয়ে যেন নিজেদের বিপদ ডেকে আনে বাংলাদেশ। শুরুর কয়েকটা বল দেখে তাণ্ডব চালান রভম্যান পাওয়েল। চার-ছক্কার ফুলঝুরিতে সাকিব-তাসকিনদের লাইন-লেংন্থ ভুলিয়ে দেন তিনি।
মুহূর্তেই কিংয়ের সঙ্গে ৬৩ রানের জুটি গড়ে ফেলেন পাওয়েল। দলীয় ১৬৩ রানে আউট হন কিং। এর আগে ৪৩ বলে ৭টি চার ও একটি ছক্কায় ৫৭ রান করেন ডানহাতি এই ওপেনার। শেষ পর্যন্ত ব্যাটিং করা পাওয়েল মাত্র ২৮ বলে ২টি চার ও ৬টি ছক্কায় ৬১ রানের ক্যামিও ইনিংস খেলেন। ওডেন স্মিথ ৪ বলে ১১ রান করেন।
বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ২টি উইকেট নেন শরিফুল ইসলাম। একটি করে উইকেট পান শেখ মেহেদি, সাকিব ও মোসাদ্দেক। এদিন সবচেয়ে খরুচে বোলিং করেছেন ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফেরা তাসকিন। ডানহাতি এই পেসার ৩ ওভারে ৪৬ রান খরচা করেন। মোসাদ্দেক কেবল এক ওভারে ১ রান দেন। বাকিরা সবাই ছিলেন খরুচে।