সিপ্লাস ডেস্ক: রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন হয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছিল আন্তঃনগর সিল্ক্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি। এর এসি বগির বেশিরভাগ যাত্রী তখন ব্যস্ত মোবাইল ফোন নিয়ে। ট্রেনটি ঈশ্বরদী বাইপাস স্টেশন অতিক্রম করার পর ওই বগিতে উঠলেন এক বই বিক্রেতা। প্রত্যেক যাত্রীর হাতে তুলে দিলেন একটি, দুটি করে বই। শিশুরা মোবাইল ফোনে গেম খেলা রেখে ডুব দিল কার্টুন, ছড়া আর রূপকথার জগতে। বড়রা মগ্ন হলো ভ্রমণ কাহিনি, সায়েন্স ফিকশন, গল্প-উপন্যাসে। বদলে গেল ট্রেনের চিত্র।
পাবনার ঈশ্বরদীর পশ্চিম টেংরি এলাকার বাসিন্দা শাহীন হোসেন। সারা বছর ট্রেনে বই বিক্রি করে জীবনযাপন করলেও ভাষার মাস ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখে ট্রেনে যাত্রীদের বইমুখী করতে এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি।
নিজে বইগুলো পড়ে বই সম্পর্কে ধারণা নিয়ে তবেই অন্যকে পড়তে দেন শাহীন। মানুষকে বই পড়িয়ে অন্যরকম আনন্দ অনুভব করেন এই মধ্যবয়সী মানুষটি।
সেদিন সিল্ক্কসিটি ট্রেনে ভ্রমণকারী লন্ডন প্রবাসী আটঘরিয়া উপজেলার বাসিন্দা কাদের মাখন পড়ছিলেন হুমায়ূন আহমেদের লেখা ‘দেয়াল’ বইটি। কথা হলো তাঁর সঙ্গে। ‘সাধারণত ট্রেনে উঠে সময় কাটাতে মগ্ন থাকি মোবাইল ফোন নিয়ে। কিন্তু আজ ট্রেনে ওঠার কিছুক্ষণ পর আমার সামনে বই নিয়ে হজির হন এক বিক্রেতা। কয়েকটি বই নাড়াচাড়া করে প্রিয় লেখকের বইটি নিয়ে পড়তে পড়তেই ট্রেন ভ্রমণ করলাম। বিষয়টি আমার খুব ভালো লেগেছে।’
রাজশাহী থেকে সিল্ক্কসিটি ট্রেনের ‘গ’ বগিতে দুই ছেলেমেয়েকে সঙ্গে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন সুমাইয়া আক্তার নামের এক নারী। তিনি বলেন, ৯ বছর বয়সী ছেলেটি মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা দুটি বই, পাঁচ বছর বয়সী মেয়েটি কার্টুন ও ছবি আঁকার তিনটি বই পছন্দ করেছে। ‘তাদের বই কিনে দেওয়ার পর আমি নিজেও নানা ধরনের চারটি বই কিনেছি। আমরা এসব বই পড়তে পড়তে সুন্দর সময় কাটিয়েছি চলন্ত ট্রেনে। ভ্রমণটা অনেক উপভোগ করেছি’- হাসিমুখে জানান তিনি।
চাটমোহর এলাকার দেবনাথ মণ্ডল। বই না কিনলেও ট্রেনে বেশিরভাগ সময় বই পড়েই কাটিয়ে দিয়েছেন। পড়া শেষে বইটি ফেরত দেওয়ার সময় শাহীন তাঁকে হাসিমুখে বলেছেন, ‘আপনি বই পড়েছেন, এ জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।’ তাঁর এই উদ্যোগ ও সুন্দর আচরণ অনেক দিন মনে থাকবে দেবনাথের।
ট্রেনের টিটিই আব্দুল আলীম বিশ্বাস মিঠু মনে করেন, মোবাইল ফোন আসক্তির কারণে অনেকেই এখন বই পড়া ভুলতে বসেছে। ভাষার মাসকে সামনে রেখে একজন বই বিক্রেতা মানুষকে বই পড়ানোয় আগ্রহী করে তুলতে যে উদ্যোগ নিয়েছেন, তা প্রশংসার যোগ্যই বটে।