ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার পর দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলে যাবে ‘মোখা’

সিপ্লাস ডেস্ক: দিন দিন মে মাস যেন ঘূর্ণিঝড়ের মাস হয়ে উঠছে। গত তিন বছর এই মাসে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এবার আসছে ঘূর্ণিঝড় মোখা। এটি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলে ধারণা করছেন আবহাওয়াবিদরা। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, নিম্নচাপ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত নিশ্চিত করে কিছুই বলা সম্ভব নয়। তবে চলতি মাসের মাঝামাঝিতে একটি ঘূর্ণিঝড় হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক গতকাল শুক্রবার এক সতর্ক বার্তায় বলেন, ৭ মে দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে, যা পরে ঘনীভূত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিষয়টি নিয়মিত গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, লঘুচাপটি নিম্নচাপে পরিণত হবে কি না, তা এখনই বলা যাবে না।’

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্টি হতে যাওয়া এ বছরের প্রথম ঘূর্ণিঝড়টির নাম দেওয়া হয়েছে ‘মোখা’। এটি আরবি শব্দ। কফির জন্য খ্যাত ইয়েমেনের ‘মোখা’ বন্দরের নামে ঘূর্ণিঝড়টির নামকরণ করেছে সে দেশের আবহাওয়া দপ্তর। মোখা অর্থ গুড কোয়ালিটি অব কফি (ভালো মানের কফি)।

ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগের (আইএমডি) শুক্রবারের তথ্য অনুসারে, দক্ষিণ-পূর্ব বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট সামুদ্রিক ঝড় মোখা আগামী ১০ মে উত্তর-উত্তরপশ্চিমে সরে গিয়ে পরদিন বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব ও মিয়ানমারের উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানতে পারে। শনিবার বঙ্গোপসাগরের দক্ষিণ-পূর্বে ঘূর্ণিঝড়টি সৃষ্টি হতে পারে। পরদিন এর প্রভাবে সেখানে লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। আগামী ৮ মে এটি আরও ঘনীভূত হয়ে নিম্নচাপের রূপ নিয়ে সেখানে অবস্থান করতে পারে।

আইএমডি জানায়, এটি আরও শক্তিশালী হয়ে প্রবল সামুদ্রিক ঝড়ে পরিণত হওয়ার সমূহ আশঙ্কা আছে। তখন ঘূর্ণিঝড়টি একটু উত্তর দিকে সরে গিয়ে মধ্য বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করবে। আগামী ৭ মে লঘুচাপ সৃষ্টি হওয়ার পর ঘূর্ণিঝড়ের শক্তি ও গতিপথ সুনির্দিষ্ট করে যাবে।

কানাডার সাসকাচোয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ জানিয়েছেন, আবহাওয়ার ইউরোপিয়ান মডেল অনুসারে ১২ মে দুপুর ১২টার পর কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হানতে পারে ঘূর্ণিঝড়টি। তবে আবহাওয়ার আমেরিকা মডেল বলছে, ১৩ মে দুপুর ১২টার পর উত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী ও ভোলা জেলার উপকূল দিয়ে স্থলভাগে আঘাত হানতে পারে। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় আমেরিকা ও ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের আবহাওয়ার পূর্বাভাস মডেলের পূর্বাভাসের মধ্যে পার্থক্য কমে এসেছে। এই সময়ে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মোখা’র স্থলভাগে আঘাতের সময় প্রায় এক দিন এগিয়েছে। তবে দুটি মডেলের মধ্যে স্থলভাগে আঘাতের সময়ের পার্থক্য ১৮ ঘণ্টা রয়েছে, এখন যা প্রতিদিন কমতে থাকবে।

আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক যুগে ঘূর্ণিঝড়গুলোর বেশিরভাগই আঘাত হেনেছে মে মাসে। ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মে মাসের ঘূর্ণিঝড়গুলো মূলত দেশের খুলনা, সাতক্ষীরা ও বাগেরহাট উপকূলে আঘাত হানে।

গত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে মে মাসকে এক প্রকার ঘূর্ণিঝড়ের মাস বলা যায়। ২০২০ সাল থেকে একের পর এক শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে মে মাসে। চালিয়েছে তাণ্ডব। ২০২০ সালে আম্পানের দাপটে ছিন্নভিন্ন হয়েছিল উপকূলবর্তী জনপদ। তার ধাক্কা সামলে উঠতে না উঠতেই ২০২১ সালে হাজির হয় ঘূর্ণিঝড় ইয়াস। এরপর ২০২২ সালে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় অশনি। এবারও মে মাসে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।

মে মাসে একের পর এক শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হওয়ার কারণ হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এ মাসে তাপমাত্রা হঠাৎ করে বাড়তে শুরু করায় বঙ্গোপসাগরে প্রচুর জলীয়বাষ্প তৈরি হয়। তার সঙ্গে একাধিক কারণ কাজ করে, যা ঘূর্ণাবর্ত তৈরি করে। সে কারণেই মে মাসে প্রতিবছরই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় তৈরি হচ্ছে।

গত মঙ্গলবার আবহাওয়া অধিদপ্তর চলতি মে মাসের দীর্ঘমেয়াদি আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেয়। সেখানে বলা হয়, এ মাসে একটি ঘূর্ণিঝড় হতে পারে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, ৮ থেকে ৯ মে একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এ থেকে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে। ১২ অথবা ১৩ তারিখে লঘুচাপটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা আছে।

ক্যালেন্ডার
শনি রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র
 
১০১১১২
১৩১৪১৫১৬১৭১৮১৯
২০২১২২২৩২৪২৫২৬
২৭২৮২৯৩০৩১  
Scroll to Top