সিপ্লাস ডেস্ক: আদালতের নির্দেশনা প্রতিপালন না করার ঘটনায় নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার পর ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞাকে সতর্ক করে আদেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। পাশাপাশি ভবিষ্যতে আদালতের আদেশ প্রতিপালনে সতর্ক থাকবেন বলেও অঙ্গীকার করেন তিনি।
বৃহস্পতিবার (১৮ মে) হাইকোর্টের বিচারপতি মাহমুদুল হক ও বিচারপতি মো. মাহমুদ হাসান তালুকদারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ রাজউক চেয়ারম্যানের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী কে এম সাইফুদ্দিন আহমেদ ও আইনজীবী মো. ইমাম হাছান। আর রিট আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস কে গোলাম রসুল, আইনজীবী ব্যারিস্টার নুরুল আজিম। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রমি।
২০০৪ সালে দেওয়া আদেশ প্রতিপালন না করায় গত ১৬ মে রাজউকের চেয়ারম্যান মো. আনিছুর রহমান মিঞাকে তলব করেছিলেন হাইকোর্ট। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তাকে সশরীরে আদালতে হাজির হতে নির্দেশ দেওয়া হয়। আদেশ প্রতিপালন না করায় কেন তার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ আনা হবে না, সে ব্যাখ্যা চাওয়া হয় তার কাছে।
আদেশ অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সকালে আদালতে হাজির হন রাজউক চেয়ারম্যান। তার পক্ষে নিঃশর্ত ক্ষমার আবেদন করেন আইনজীবী। সে আবেদনে বলা হয়, আদালতের আদেশ প্রতিপালনে বিলম্বের বিষয়টি একেবারেই অনিচ্ছাকৃত অবেহেলা বা ভুল। আদালতের প্রতি তিনি বরাবরই শ্রদ্ধাশীল। ভবিষ্যতে আদালতের আদেশ প্রতিপালনে সদা সতর্ক থাকার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন। তার অনিচ্ছাকৃত অবাধ্যতার জন্য নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনা করছি। দয়া করে তার এই আবেদন গ্রহণ করে তাকে অব্যাহতি দেওয়া হোক, ক্ষমা করা হোক। এরপর আদালত তাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিয়ে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করেন।
এর আগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের আমলে নিকুঞ্জ এলাকায় ফরিদা বেগম নামের এক ব্যক্তিকে প্লট বরাদ্দ দেওয়া হয়। তিনি পরে খালিদের কাছে প্লটটি বিক্রি করেন। রাজউক পার্ক নির্মাণ করার কথা জানিয়ে খালিদ মাহমুদের কেনা প্লটসহ মোট ১২টি প্লাটের বরাদ্দ বাতিল করে।
বাতিলের এ আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন খালিদ মাহমুদ। ওই রিটের প্রাথমিক শুনানির পর ২০০৪ সালের ৩০ মার্চ হাইকোর্ট প্লট বরাদ্দ বাতিলের আদেশ স্থগিত করার পাশাপাশি এর বৈধতা প্রশ্নে রুল দেন।
গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউক এবং রাজউক চেয়ারম্যানকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়। সেই সঙ্গে দ্রুত সময়ের মধ্যে প্লট বরাদ্দ সংক্রান্ত নথি রাজউককে জমা দিতে নির্দেশ দেন আদালত। এরপর দীর্ঘ সময় রিট আবেদনকারী খালিদ মাহমুদ অসুস্থ থাকায় মামলাটি চাপা পড়ে যায়।
কিন্তু দীর্ঘ সময়েও রাজউক সে নথি জমা না দেওয়ায় বিষয়টি আদালতের নজরে আনতে গত বছর আবেদন করেন খালিদ মাহমুদ। সে আবেদনের শুনানির পর গত বছরের ১২ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ফের আদেশ দেন।
আদেশে ২০০৪ সালের ৩০ মার্চের আদেশ প্রতিপালন করতে নির্দেশ দেন। এরপরও আদেশের বাস্তবায়ন না করায় সম্প্রতি আদালতে আবেদন করেন খালিদ মাহমুদ।
১৬ মে সে আবেদনের শুনানির পর রাজউক চেয়ারম্যানকে তলব করার পাশাপাশি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্লট বরাদ্দের নথি পাঠাতে নির্দেশ দেন উচ্চ আদালত। আদেশের পরদিনই সে নথি আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন রাজউকের আইনজীবী মো. ইমাম হাছান।