কর্ণফুলীর দুই তীরে হচ্ছে ৬টি শিল্পাঞ্চল আর ১১ স্যাটেলাইট টাউন

ছবি: সংগৃহীত
CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন

সিপ্লাস ডেস্ক: পাঁচ বছর আগে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরির কাজ শুরুর পর থেকে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে চীনের সাংহাইয়ের মতো নদীর দুই তীর ধরে সম্প্রসারণের কথা বেশ জোরেশোরেই শোনা যাচ্ছিলো। এবার চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে উদ্যোগ নিতে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরের মহাপরিকল্পনায় চট্টগ্রামে কর্ণফুলী নদীর দুই তীর ও বঙ্গোপসাগর উপকূলে অন্তত ১১টি উপশহর গড়ে তোলার পরিকল্পনা নিয়েছে সংস্থাটি।

সিডিএ’র চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘কর্ণফুলী নদীর তলদেশে নির্মাণাধীন বঙ্গবন্ধু টানেলের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। সরকার শুরু থেকেই এই টানেলকে ঘিরে কর্ণফুলীর অপর পাড়ে নতুন শহর গড়ে তুলে সাংহাইয়ের আদলে ওয়ান সিটি টু টাউন গড়ে তোলার ঘোষণা দিয়েছিলো। সিডিএ নতুন মহাপরিকল্পনায় সেটি বাস্তবায়ন করবে। একই সঙ্গে বর্তমান শহরের আশপাশের পৌরসভা ও উপজেলাগুলোকে গড়ে তোলা হবে স্যাটেলাইট টাউন হিসেবে।’

১৬০ বর্গ কিলোমিটারের চট্টগ্রাম শহরে বর্তমানে ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। পড়াশোনা এবং কাজের খোঁজে শহরে আসা মানুষের সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত; যা জন্ম দিচ্ছে নতুন নতুন সমস্যার।

এই যখন পরিস্থিতি, তখন ৩৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা ব্যায়ে আগামী ২০ বছরের জন্য এ নতুন মহাপরিকল্পনা তৈরি কাজ করছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। ২০২২ সালের জুন মাসে ডাটা কালেকশনের কাজ শুরু করে সিডিএ; ২০২৩ সালে এ কাজ শেষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। এর আগে ১৯৯৫-২০১৫ সালের ২০ বছর মেয়াদি মাস্টারপ্ল্যানের অনুমোদন দেওয়া হয়েছিল ১৯৯৯ সালে।

চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নগর-পরিকল্পনাবিদ কাজী হাসান বিন শামস বলেন, ‘চীনের সাংহাই বা তুরস্কের ইস্তাম্বুল শহরের মত কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে আমরা চট্টগ্রাম শহরকে বিস্তৃত করতে চাই। তারই অংশ হিসেবে আমরা একটি যুগোপযোগী মহা পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামের আশেপাশের উপজেলা ও পৌরসভাগুলোকে উপশহরে পরিণত করার মাধ্যমে শহরকে বিকেন্দ্রীকরণের কাজটি আমরা করবো; যার ফলে মূল শহরের উপর চাপ কমবে। স্যাটেলাইট টাউনগুলোতে গ্রামের সব বৈশিষ্ট্য অক্ষুণ্ণ রেখেই শহরের সুবিধা পৌছে দেওয়া হবে।’

সিডিএ’র খসড়া পরিকল্পনা অনুযায়ী, নতুন চট্টগ্রাম মহানগর হবে বর্তমান আয়তনের চাইতে প্রায় পাঁচগুণ বড়। পরিকল্পনার পুরোটাই হবে নদী ও সাগরকে উপজীব্য করে। নগরের সীমানা হিসেবে দক্ষিণে সাঙ্গু নদী, পূর্বে রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পোমরা, ইছামতী নদীর মোহনা ও পার্বত্য চট্টগ্রাম, উত্তরে সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়া, হাটহাজারীর সরকারহাট ও রাউজান উপজেলা ও পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর। পরিকল্পনার কেন্দ্রে থাকবে কর্ণফুলী নদী। নদীর দুই তীরে গড়ে তোলা হবে ১১টি স্যাটেলাইট টাউন ও ৬টি শিল্পাঞ্চল।

স্যাটেলাইট টাউনগুলো হলো- হাটহাজারী, মদুনাঘাট, কুমিরা, রাউজান, গহিরা, পাহাড়তলী, বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা, রাঙ্গাদিয়া ও শিকলবাহা।

এছাড়া সীতাকুণ্ড, আনোয়ারা, কর্ণফুলী, বোয়ালখালী, রাউজান ও রাঙ্গুনিয়া উপজেলায় গড়ে তোলা হবে শিল্পাঞ্চল।

প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো আবু ঈসা আনছারী বলেন, ‘পূর্বের মহাপরিকল্পনাগুলোতে কোথায় আবাসিক আর কোথায় শিল্পাঞ্চল হবে তা পরিবেশ ও ভূতাত্ত্বিক জরিপের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়নি। যে কারণে নগরের ভেতরকার শিল্পাঞ্চলগুলো এখন মৃতপ্রায়। এবার মাটি, বায়ু, পরিবেশ ও প্রতিবেশ যাচাই করে শিল্প ও আবাসনের জন্য উপযুক্ত এলাকা নির্ধারণ করা হবে।’

সূত্র: দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড