নিজস্ব প্রতিবেদক: গত ৭ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম বন্দরের ইতালি রুটে সরাসরি জাহাজ সার্ভিস চালু হওয়ার পর একে একে বাড়তে থাকে এর পরিধি। পরবর্তীতে চালু হয় ফ্রান্স, স্পেন, নেদারল্যান্ড, পর্তুগাল ও ইংল্যান্ডের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ সেবা।
এবার তারই ধারাবাহিকতায় চালু হতে যাচ্ছে স্লোভেনিয়ার সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ। এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সভাপতি ফারুক হাসানের আমন্ত্রণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশ স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপারের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দর পরিদর্শনে এসেছেন। পোর্ট অব কোপারের সাথে সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচলের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের লক্ষ্যে আগত প্রতিনিধি দল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহজাহান এর সাথে বন্দরের বোর্ড রুমে এক বৈঠকে মিলিত হন।
বৈঠকে বিজিএমইএ’র প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম, সহ-সভাপতি রাকিবুল আলম চৌধুরী, পরিচালক এম. আহসানুল হক, প্রাক্তন পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ, স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপারের কমার্শিয়াল ডিরেক্টর মিটজা দুজ, স্লোভেনিয়ায় বাংলাদেশের অনারারি কনসাল মিহা গ্রোজনিক, স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপারের সেলস ম্যানেজার বোরুট সিমারল, ঢাকায় স্লোভেনিয়ার কনস্যুলেটের পক্ষে ছিলেন সাদেকুল কবির ও জাহিদ আহমেদ, বাংলাদেশ ফ্রেইট ফরওয়ার্ডার্স এসোসিয়েশনের সভাপতি কবির আহমেদ, সহ-সভাপতি খায়রুল আলম সুজনসহ বিজিএমইএ’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এসময় আরো ছিলেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (প্রশাসন ও প্লানিং) মো. জাফর আলম, পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম, ক্যাপ্টেন ফরিদুল আলম, ভারপ্রাপ্ত সচিব মো. নাসির উদ্দিনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ।
সভায় চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম. শাহাজাহান বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রবেশদ্বার চট্টগ্রাম বন্দরের অবকাঠামোগত উন্নয়নপূর্বক সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আঞ্চলিক বাণিজ্যিক হাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে কার্যক্রম চলছে। করোনাকালীন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দায় ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরসমূহে কনটেইনার স্বল্পতা ও জাহাজ সংকটের কারণে পণ্য পরিবহনে ব্যয় ও সময় বেড়ে যায়। এরই প্রেক্ষিতে দেশের অর্থনৈতিক স্বার্থে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ পণ্য পরিবহনে ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরসমূহ পরিহারপূর্বক ইতালি, ইংল্যান্ড, রোটারডেম, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ইত্যাদি বন্দরসমূহ সরাসরি কনটেইনার জাহাজ চলাচলের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে বিদেশি ক্রেতাদের সময় এবং খরচ অনেকাংশ হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানে স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপারের সাথে সরাসরি জাহাজ চলাচলের উদ্যোগকে সফল করার লক্ষ্যে চট্টগ্রাম বন্দর সম্ভাব্য সকল সহযোগিতা প্রদানে প্রস্তুত রয়েছে। পোর্ট অব কোপারের কমার্শিয়াল ডিরেক্টর মিটজা দুজ বলেন, বাংলাদেশ থেকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহে তৈরি পোশাকসহ বিপুল পরিমাণ পণ্য চালান বিভিন্ন ট্রান্সশিপমেন্ট পোর্টের মাধ্যমে রপ্তানি হচ্ছে। এতে অতিরিক্ত সময় ও অর্থ ব্যয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে পণ্য পরিবহনে স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপার বন্দরের সাথে চট্টগ্রাম বন্দরের সরাসরি জাহাজ পরিচালনা করা হলে সময় ও অর্থ অনেকাংশে সাশ্রয় হবে। ফলে রপ্তানি বাণিজ্যের সক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে এবং পূর্ব ও মধ্য ইউরোপে বাংলাদেশের সাথে রপ্তানি বাণিজ্যে বিশাল সম্ভাবনা উন্মুক্ত হবে।
সভায় সৈয়দ নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে বর্হিবিশ্বে প্রতিযোগিতামূলক করার জন্য, ট্রান্সশিপমেন্ট বন্দরসমূহের সময়ক্ষেপণ ও জাহাজ জট এড়ানোর জন্য এবং সময় ও খরচ কমানোর স্বার্থে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন রপ্তানি দেশে পণ্য প্রেরণে সরাসরি জাহাজ চলাচলের কোন বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপার চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ব্যবস্থা নিলে রপ্তানি বাণিজ্যের প্রবৃদ্ধি আরো বৃদ্ধি পাবে। এতে আরো বক্তব্য রাখেন, পোর্ট অব কোপারের সেলস ম্যানেজার বোরুট সিমারল, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের পরিচালক (পরিবহন) এনামুল করিম, বাফা সভাপতি কবির আহমেদ প্রমুখ।
সভা শেষে স্লোভেনিয়ার পোর্ট অব কোপারের প্রতিনিধি দল, বিজিএমইএ নেতৃবৃন্দ, বন্দর পরিচালক (পরিবহন) চট্টগ্রাম বন্দরের জেটিতে বিভিন্ন অপারেশনাল কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।
