
রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: চট্টগ্রামে ‘বন্ধু বিদায় দিবস’ নামে চমকপ্রদ আয়োজনের মাধ্যমে চট্টগ্রামের সহকারী পুলিশ সুপার (রাঙ্গুনিয়া- রাউজান সার্কেল) মো. আনোয়ার হোসেন শামীমকে বিদায়ী সম্মান জানিয়েছেন সড়ক শ্রমিকেরা। বৃহস্পতিবার (১৯ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় রাঙ্গুনিয়া পৌর শহরের রোয়াজারহাট এলাকাস্থ চট্টগ্রাম অটো রিকশা – অটো টেম্পো শ্রমিক ইউনিয়ন কার্যালয়ে কেক কেটে এবং স্মৃতিচারণমূলক আলোচনার মাধ্যমে দিবসটির আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন অর্ধশতাধিক চালক ও শ্রমিক। সংগঠনের সভাপতি নুরুল আজিম মনুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন রাঙ্গুনিয়া মডেল থানার ওসি মাহবুব মিলকী, দক্ষিণ রাঙ্গুনিয়া থানার ওসি ওবাইদুল ইসলাম, সংগঠনটির প্রধান উপদেষ্টা বদিউল খায়ের লিটন চৌধুরী, সাংবাদিক জগলুল হুদা প্রমুখ।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, রাঙ্গুনিয়ার সার্কেল এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম সম্প্রতি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি লাভ করেন। এ প্রেক্ষিতে তাকে র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এ বদলির আদেশ দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে পুলিশ সদরদপ্তর। বৃহস্পতিবার রাঙ্গুনিয়ায় তার শেষ কর্মদিবসে তাকে অভিনব এই সম্মান দিলো সমাজের খেটে খাওয়া মানুষের এ প্রতিনিধিরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৬ আগষ্ট ২০২০ তারিখে রাঙ্গুনিয়া- রাউজানের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) হিসেবে সরকারি দায়িত্বভার গ্রহণ করেন এএসপি আনোয়ার শামীম। এরপর থেকেই তিনি বিশেষত সমাজের নিম্ন আয়ের মানুষের কল্যাণে ধারাবাহিক উদ্যোগ গ্রহণ করেন। বিশেষ করে সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে তার নেওয়া উদ্যোগ স্থানীয় ও জাতীয়ভাবে প্রশংসা কুড়ায়। চট্টগ্রাম – কাপ্তাই সড়কে চাঁদাবাজি নিয়ে অতিষ্ঠ ছিলেন চালক-শ্রমিকেরা। এএসপি আনোয়ার শামীম দায়িত্ব নিয়ে প্রথমেই কঠোর হস্তে সবরকম চাঁদাবাজি বন্ধ করার উদ্যোগ নেন। এরপর নিরক্ষর – প্রশিক্ষণহীন চালকদেরকে প্রশিক্ষিত করার জন্য তিনি চালু করেন অভিনব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ভ্রাম্যমাণ ট্রাফিক স্কুল’। এর মাধ্যমে তিনি প্রায় সহস্রাধিক চালক/ সহকারীকে ট্রাফিক আইনের দীক্ষা দেন।
বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাস্তার বিভিন্ন মোড়ে তার উদ্যোগে রশি টানিয়ে লেন নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। যার সুফল ভোগ করছেন চালক/শ্রমিক/ পথচারীসহ স্থানীয়রা। এছাড়া তার উদ্যোগে স্থানীয় জনতা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে রাস্তার পাশের বিভিন্ন খানাখন্দ ভরাটের পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। তার গৃহীত নানামুখী পদক্ষেপে কাপ্তাই সড়কে দুর্ঘটনার প্রবণতা অনেকাংশে হ্রাস পায়। শীতকালে ঘুমঘুম চোখে গাড়ি চালানোকে দুর্ঘটনার অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে এটি দূর করতেও তিনি চালকদেরকে সচেতন করেন। মধ্যরাতে চালকদের মুখ ধোয়া ও চা খাওয়ার জন্য তার উদ্যোগে গ্রহণ করা হয় ‘রিফ্রেশমেন্ট কর্নার’ নামে উদ্ভাবনী উদ্যোগ।
রাঙ্গুনিয়ার রোয়াজারহাট বাজারের সিএনজি সমিতির সভাপতি নুরুল আজিম মনু বলেন, এএসপি সাহেব কোনো রকম স্বার্থ ছাড়া দিনরাত আমাদের জন্য খেটে গেছেন, আমাদের অসুবিধা দূর করতে কাজ করে গেছেন। তার মতো আমাদের একজন খাঁটি বন্ধুর বিদায় আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টের। তাই তার সম্মানে আমাদের সামান্য এই আয়োজন।
উল্লেখ্য, এএসপি মো. আনোয়ার হোসেন শামীম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেমস বিভাগ থেকে পড়াশুনা সমাপ্তির পর ৩৪ তম বিসিএস এর মাধ্যমে পুলিশ ক্যাডারের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) পদে যোগদান করেন। তার মানবিক ও সমাজহিতৈষী কর্মকাণ্ড দেশব্যাপী প্রশংসা কুড়ায়। তিনি খাগড়াছড়ি জেলার উত্তর বড়বিল গ্রামের আব্দুল মান্নান ও বিলকিস বেগম দম্পত্তির ৩ পুত্র ও ২ কন্যার মধ্যে তৃতীয়।