ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা : নিহত অন্তত ৯, পরমাণুকেন্দ্র নিয়ে উদ্বেগ

ছবি: সংগৃহীত
CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন

সিপ্লাস ডেস্ক: ইউক্রেনজুড়ে রাশিয়া আবারও ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে, যাতে দেশটির বিভিন্ন অংশে বাড়িঘর ও জ্বালানি অবকাঠামোর ক্ষতি হয়েছে। কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় সমন্বিত ক্ষেপণাস্ত্র হামলা। ইউক্রেনে মস্কোর সামরিক অভিযান শুরুর বর্ষপূর্তির দুই সপ্তাহ পর এই হামলা চালানো হলো।

ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী বলছে, রাশিয়া ৯০টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন নিক্ষেপ করেছে। এর মধ্যে ড্রোনের সংখ্যা আটটি, যার মধ্যে চারটি ইরানের তৈরি।

দেশটির ২৭টি অঞ্চলের অন্তত ১০টিতে বুধবার রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে এসব আক্রমণ চালানো হয়। রাশিয়ার ছোড়া এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মধ্যে ৩৪টিকে গুলি করে আকাশেই ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে বলে ইউক্রেন দাবি করছে।

‘কদর্য কৌশল’
ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি রাশিয়ার সর্বশেষ এই হামলাকে মস্কোর ‘কদর্য কৌশল’ বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘ইউক্রেনের জনগণকে ভীতসন্ত্রস্ত করার জন্য শত্রুরা ৮১টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে তারা তাদের কদর্য কৌশলে ফিরে গেছে।’

দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্র কুলেবা বলছেন, ‘এই হামলার পেছনে কোনো সামরিক উদ্দেশ্য নেই। এটা রাশিয়ার বর্বরতা।’

জাপোরিঝিয়া পরমাণুকেন্দ্রে বিদ্যুৎ নেই
এই হামলার ফলে ইউরোপের সর্ববৃহৎ পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র জাপোরিঝিয়ায় বিদ্যুৎ নেই। বিভিন্ন শহরেও বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেছে। এই বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘের পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএর প্রধান রাফায়েল গ্রোসি। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

গ্রোসি বলেছেন, ‘এ নিয়ে ষষ্ঠবারের মতো, আমি আবারও বলছি ষষ্ঠবার এই কেন্দ্রে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেল। আপনাদের মনে করিয়ে দিচ্ছি—ইউরোপে এটাই সবচেয়ে বড় পরমাণু বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র। আমরা কী করছি? আমরা কিভাবে এখানে বসে আছি এবং ঘটনা ঘটতে দিচ্ছি? এভাবে তো চলতে পারে না।’

আইএইএর প্রধান সতর্ক করে দিয়ে বলেন, ‘এ রকম যদি আমরা বারবার হতে দিই, ভাগ্য হয়তো একসময় ফুরিয়ে যাবে।’

কর্মকর্তারা বলছেন, জাপোরিঝিয়া পরমাণু বিদ্যুকেন্দ্রটি এখন ডিজেল দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। এই কেন্দ্রে যে পরিমাণ ডিজেল মজুদ আছে তা দিয়ে আরো ১০ দিন চলতে পারে।

ইউক্রেনের জাপোরিঝিয়া অঞ্চলের কিছু অংশ এখন মস্কোর নিয়ন্ত্রণে। এই অঞ্চলে রাশিয়ার নিযুক্ত কর্মকর্তারা বলছেন, ইউক্রেন সেখানে বিদ্যুতের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। এ ঘটনাকে তারা ‘উসকানিমূলক’ বলেও উল্লেখ করেছেন।

রাজধানীসহ বড় বড় শহরে বিদ্যুৎ সংকট
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ, উত্তরের খারকিভ এবং দক্ষিণের ওডেসার মতো বড় বড় শহরেরও অনেক জায়গায় এখন বিদ্যুৎ নেই।

কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিচকো বলছেন, তার শহরের ৪০ শতাংশ বাসিন্দাদের বাড়িতে এখন উত্তাপ নেই। কর্মকর্তারা বলছেন, বিদ্যুৎ সরবরাহ পুনরুদ্ধারের জন্য জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে মেরামতের কাজ চলছে।

কিয়েভের বাসিন্দারা বলছেন, বুধবার রাতে তারা সাত ঘণ্টা ধরে বিমান হামলার সতর্ক সংকেত শুনেছেন।

রাজধানী উপকণ্ঠে স্বামী ও তিন মাস বয়সী শিশু এবং তাদের বাবা-মা ও দাদা-দাদিকে নিয়ে থাকেন ইরিনা নেমিরোভিচ। তিনি বলেছেন, ‘আমরা বেশ কয়েকটি বিস্ফোরণের আওয়াজ শুনেছি। কিন্তু আমরা জানি না এগুলো বিমান বিধ্বংসী সিস্টেমের, নাকি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতের। কিন্তু খুব জোরে জোরে বিস্ফোরণ হচ্ছিল।’

অন্তত ৯ জন নিহত
বিভিন্ন সূত্র থেকে পাওয়া খবরে বলা হচ্ছে এসব হামলায় কমপক্ষে ৯ জন প্রাণ হারিয়েছে।

পশ্চিমাঞ্চলীয় লাভিভে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে বহু বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে গেছে এবং অন্তত পাঁচজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, সেখানে আরো অনেক মানুষ ধ্বংসস্তূপের নিচে আটকা পড়ে আছে।

অন্যদিকে কর্তৃপক্ষ বলছে, খেরসন ও দিনিপ্রপেত্রোভস্ক শহরেও রাশিয়ার গোলাবর্ষণে আরো তিনজন প্রাণ হারিয়েছে।