প্রেস বিজ্ঞপ্তি: অধ্যক্ষ মাওলানা আনোয়ারুল ইসলাম খান (রহ.)যুগ-যুগান্তরে, সভ্যতার ক্রমান্বয়ে সৃষ্টির সূচনা থেকে আজ অবধি মানবজাতির ইহলৌকিক জীবনান্তে পরলোকের যাত্রায় গমন একটি চিরায়ত বিষয়।
ইহলৌকিক এই যাত্রায় যাঁরা নিজেদের জীবন বর্ণাঢ্য কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে সুশোভিত করে সমাজের জন্য আদর্শ হয়ে আছেন; অধ্যক্ষ আলহাজ্ব মাওলানা কাজী আনোয়ারুল ইসলাম খান (রহ.) তাঁদেরই একজন। চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার হুলাইন গ্রামে ১৯৬২ সালের ২৯ আগস্ট তাঁর জন্ম। দক্ষিণ চট্টলার প্রাচীন মাদরাসা সুখছড়ি খালেকীয়া মাদরাসা থেকে দাখিল, শাহচান্দ আউলিয়া (রহ.) কামিল মাদরাসা থেকে আলিম এবং চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদরাসা থেকে তিনি ফাজিল ও কামিল সম্পন্ন করেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে স্নাতক (আরবি) ও স্নাতকোত্তরও সম্পন্ন করেন। শিক্ষাজীবনের প্রতিটি স্তরেই তাঁর সাফল্য ও মেধার উজ্জ্বল উপমা রয়েছে। ছাত্রজীবনের মতো কর্মজীবনেও তিনি ছিলেন অনন্য একজন ব্যক্তিত্ব। বুড়িশ্চর জিয়াউল উলুম ফাজিল মাদরাসায় সহকারী মাওলানা হিসেবে তাঁর শিক্ষকতা শুরু হয়ে আরবি প্রভাষক পদে উন্নীত হন। পরবর্তীতে হযরত খাজা কালু শাহ (রহ.) আলিম মাদরাসা এবং ফয়জুল বারী ফাজিল মাদরাসায় অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। দ্বীন-মাযহাবের খিদমতে তাঁর নিরলস কর্মকাণ্ডের ধারা অব্যাহত ছিলো জীবনব্যাপী। তিনি ছিলেন অত্যন্ত বাগ্মী ও আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী। দ্বীন-ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তাঁর শ্রুতিমধুর ও হৃদয়গ্রাহী বক্তব্য শ্রবণের জন্য দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ তাঁর খেতাবতের মসজিদে ছুটে আসতেন।
চট্টগ্রাম নাসিরাবাদ শাহী জামে মসজিদ, চকবাজার সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদ, সুগন্ধা আ/এ জামে মসজিদ, হাজী নছু মালুম মসজিদ, নাসিরাবাদ চেমনবাগ জামে মসজিদ, নূর বেগম জামে মসজিদসহ চট্টগ্রামের অসংখ্য ঐতিহ্যবাহী মসজিদে তিনি খতিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তাহাড়া বাংলাদেশ টেলিভিশন চট্টগ্রাম কেন্দ্র, ইসলামিক টিভি, মোহনা টিভি, বৈশাখী টিভিতে ধর্মীয় আলোচক হিসেবেও তিনি আলোচনা করতেন। বাগ্মিতার সাথে তাঁর লিখনি দক্ষতাটাও ছিলো প্রশংসনীয়। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে তিনি জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক পত্রিকা ও বিভিন্ন ম্যাগাজিনে নিয়মিত লেখালিখি করতেন।
তাছাড়া তাঁর রচিত “মুফতী আহমদ এয়ার খান নঈমী: জীবন ও কর্ম” এবং অনূদিত “বিশ্বনবী নূরের রবি”, ”তাজকেরাতুল মোহাদ্দেসীন” কিতাবত্রয় পাঠকমহলে বেশ সমাদৃত। সাংগঠনিকভাবেও তিনি ছিলেন একজন অত্যন্ত দক্ষ ও বিচক্ষণ ব্যক্তিত্ব। ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের যুগ্ম-মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন। ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক আয়োজিত ইমাম প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে তিনি প্রশিক্ষক হিসেবে অত্যন্ত সুনামের সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন। জীবদ্দশায় তিনি তিনবার পবিত্র হজ্ব সম্পাদন করেন। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২১ তিনি ইন্তেকাল (৫৮) করেন এবং হাজার হাজার ভক্ত-আশেকের উপস্থিতিতে তাঁর নামাযে জানাযা সম্পন্ন হয়। আজ তাঁর ২য় ওফাতবার্ষিকী। প্রতি বছর সাংগঠনিক ও পারিবারিকভাবে তাঁর ওফাতবার্ষিকী পালন করা হয়।