শিবির সন্দেহে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বুয়েটের মেধাবী শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে। তাকে পিটিয়ে হত্যার প্রমাণ পাওয়ার কথা জানিয়েছে পুলিশ। আবরারের মরদেহের ময়নাতদন্তের পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদও বলেছেন, ‘ছেলেটিকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শেরে বাংলা হলের ১০১১নং রুমে থাকতেন আবরার ফাহাদ।আবরারের রুমে ঢুকে দেখা গেল, চারটি টেবিল ও বেড। একটি টেবিলে খোলা রয়েছে তার খাতা। এতে অসম্পূর্ণ একটি অংক। সম্ভবত মারধরের জন্য ২০১১ নং রুমে ডেকে নেওয়ার আগে এই অংকই কষছিলেন আবরার। তবে অংকের সমীকরণটা আর মেলানো হলো না এই বুয়েট ছাত্রের। ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্নও রয়ে গেল অপূর্ণই।
আবরারের পরিবারের সদস্যরা জানায়, ১০ দিন আগে ছুটিতে দুই ভাই বাড়িতে এসেছিলেন। ২০ তারিখ পর্যন্ত বাড়িতে থাকতে চেয়েছিলেন আবরার। তবে সামনে পরীক্ষা, পড়া হচ্ছে না বলে গতকাল ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন তিনি।
মা রোকেয়া খাতুন বলেন, গতকাল সকালে আমি তাকে নিজে ঘুম থেকে ডেকে তুলি। সে ঢাকায় রওনা দেয়। মাঝে তিন থেকে চারবার ছেলের সঙ্গে কথা হয় আমার। বিকেল পাঁচটায় হলে পৌঁছে আমাকে ফোন দেয়। এরপর আর কথা হয়নি। রাতে অনেকবার ফোন দিয়েছিলাম, ফোন ধরেনি। আমি মানতে পারছি না যে আমার ছেলে বেঁচে নেই।
আবরারের টার্ম পরীক্ষা থাকায় রোববার বিকালেই বাড়ি থেকে আসেন। এরপর যান টিউশনিতে। সেখান থেকে ফেরার পরই তাকে ডেকে নিয়ে যাওয়া হয় ২০১১ নাম্বার রুমে। এ রুমেই শিবির সন্দেহে তাকে বেধড়ক পেটানো হয় তাকে। ঘটনা শুনে গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া থেকে চলে এসেছেন স্বজনেরা। আবরারের সিটে বিছানো সবুজ চাদর জড়িয়ে তারা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
তাদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে সেখানকার পরিবেশ। এক স্বজন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, ‘পড়ালেখা করার জন্য আবরার এখানে এসেছিল। এভাবে তারা তাকে মেরে ফেলতে পারল!’
তাকে যে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই হত্যা করেছে সে দাবি করেছেন তার সহপাঠী ও হলের শিক্ষার্থীরা। এ অভিযোগে পুলিশ এ পর্যন্ত ছয়জনকে আটক করেছে। পুলিশ বলছে, হত্যাকাণ্ডে যেই জড়িত থাকুক ছাড় পাবেন না।