যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভুঁইয়ার একটি টর্চার সেলের সন্ধান পেয়েছে র্যাব।
বুধবার রাতে গুলশানের বাসা থেকে গ্রেফতারের পর র্যাব ও পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ টর্চার সেলের কথা স্বীকার করেন। এরপর অভিযান চালায় র্যাব-৩ এর একটি দল। রাত সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনের উল্টোদিকে ইস্টার্ন কমলাপুর টাওয়ারের চতুর্থ তলায় ওই টর্চার সেলের সন্ধান পাওয়া যায়।
টর্চার সেল থেকে ২টি ইলেকট্রিক শক দেয়ার অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি, গায়ের চামড়া জ্বলে-জ্বালাপোড়া করে এমন বৈদ–্যতিক যন্ত্রপাতি, বিপুল পরিমাণ লাঠিসোটা, হকিস্টিক, ১৯০ পিস ইয়াবা, ৫ ক্যান বিয়ার, ৭শ’ গ্রাম সীসা, দেড় কেজি সীসা খাওয়ার কয়লা, তিনটি মোবাইল, ২টি ল্যাপটপ ও ৫টি লাঠি, ২টি অস্ত্রের তেলের বোতল ও নগদ ২৩ হাজার ৫০০ টাকা।
জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ জানায়, কেউ চাঁদা দিতে অস্বীকার করলে বা কারও সঙ্গে তার শত্রুতা তৈরি হয়েছে- এমন ব্যক্তিদের টর্চার সেলে ধরে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে আটকে রাখত তার সহযোগীরা। এরপর তাদের ওপর চলতো অমানুষিক নির্যাতন। চাঁদার টাকা না আসা পর্যন্ত নির্যাতন চালানো হতো।
ভুক্তভোগীদের বরাত দিয়ে র্যাব জানায়, হাত-পা বেঁধে ওই টর্চার সেলে আটকে রেখে শরীরের বিভিন্ন অংশে শক দেয়া হতো। দাবিকৃত চাঁদা পেলেই সেখান থেকে ছাড়া পেতেন ভুক্তভোগীরা।
র্যাবের এক কর্মকর্তা বলেন, খালেদ অস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতারের পর গোয়েন্দা তথ্য ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এমন ভুক্তভোগীদের দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে টর্চার সেলের সন্ধান পেয়ে আমরা অভিযান পরিচালনা করি।
প্রসঙ্গত, বুধবার রাতে দীর্ঘ অভিযান শেষে গুলশানের বাসা থেকে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়াকে গ্রেফতার করে র্যাব। এ সময় অস্ত্র, গুলি, মাদকসহ গ্রেফতার করা হয়। এর পর থেকে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত র্যাব-৩ এর হেফাজতে ছিলেন খালেদ।
বৃহস্পতিবার মামলা দায়েরের পর খালেদকে গুলশান থানায় হস্তান্তর করা হয়।
বুধবার খালেদকে গ্রেফতারের আগে ফকিরাপুলের ইয়াংমেন ক্লাবে নিষিদ্ধ ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র্যাব। এখান থেকে দুই নারীসহ ১৪২ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয়া হয়েছে। ক্যাসিনোতে মদ আর জুয়ার বিপুল সরঞ্জামের পাশাপাশি প্রায় ২৫ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
ক্লাবটির সভাপতি খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। অনেক দিন ধরে এখানে জুয়াসহ নানা অপকর্ম চলছিল। সাম্প্রতিককালে অতিমাত্রায় বেড়ে যাওয়ার পর বুধবার অভিযান পরিচালিত হয়। ইয়াংমেন্স ক্লাবের পর ওই রাতেই ঢাকার আরও তিনটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব।
র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক সারোয়ার বিন কাশেম বলেন, ইয়াংমেন্স ক্লাব থেকে মাদক এবং জুয়ার সরঞ্জামাদি উদ্ধার করা হয়েছে। ক্লাবের কাউন্টার থেকে প্রায় ২৫ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।
তিনি বলেন, এদিন মতিঝিলের ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাব এবং বনানী এলাকার একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালানো হয়। ওয়ান্ডারার্স ক্লাব থেকে মাদক, জাল টাকা, বিপুল পরিমাণ টাকা ও ক্যাসিনো সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে।
এরপর ক্যাসিনোটি সিলগালা করে দেয়া হয়। বনানীর আহমেদ টাওয়ারে অবস্থিত গোল্ডেন ঢাকা বাংলাদেশ নামে ক্যাসিনোতে অভিযান চালিয়ে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের নেতৃত্বে আছেন মমিনুল হক সাঈদ এবং আবু কাউসার মোল্লা নামে দুই ব্যক্তি। দুজনই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।
এদিকে বুধবার রাতেই গুলিস্তানে পীর ইয়েমেনী মার্কেটসংলগ্ন একটি ক্যাসিনোতে অভিযান চালায় র্যাব। স্থানীয় কয়েকজন জানান, এ ক্যাসিনোর নেতৃত্বে আছেন ইসমাইল হোসেন সম্রাট।
খালেদ মাহমুদের সন্ধানে বুধবার দুপুরের পর থেকে তার গুলশান-২ এর ৫৯ নম্বর রোডের ৫নং বাসা ঘিরে রাখে র্যাব। প্রিমোরোজ গার্ডেন নামে ৬ তলাবিশিষ্ট এ ভবনের তিনতলায় পরিবার নিয়ে থাকেন যুবলীগ নেতা খালেদ।
বাড়ির ব্যবস্থাপক জানান, প্রথমে ডিবি পরিচয়ে একদল লোক বাসায় আসে। এর পর আসে র্যাব। রাতে এখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। এ সময় বাসার লকার ও দেয়াল আলমিরা থেকে অবৈধ অস্ত্র, ইয়াবা, টাকা, ডলার উদ্ধার করা হয়।