লেবুচাষ পাল্টে দিয়েছে চট্টগ্রামের ফটিকছড়ির মানুষের অর্থনৈতিক দৃশ্যপট। উপজেলার বাগান বাজার, দাঁতমারা,নারায়ানহাট, ভূজপুর, পাইন্দং, লেলাং ও নানুপুর ইউপি’র হাজার হাজার পরিবারের জীবনে এনে দিয়েছে স্বচ্ছলতা। ফটিকছড়ি উপজেলার ৭ ইউনিয়নে জমি-পাহাড়ে ২৫০ হেক্টর জায়গায় জুড়ে ৫ শ’ত বেশি লেবু বাগান রয়েছে। এসব বাগানে সীডলেস, কাগজী, এলাচি, কলম্বো, জারা ও আশা লেবু’র চাষ হচ্ছে।
তবে বাগান বাজার ইউপির’ রহমতপুর ওয়ার্ডের রহমতপুর হারবাতলী, নয়দোলং কচুয়াখোন্দায় নয়দোলন ও কোচিয়া কোন্দার ৫ গ্রামের প্রায় ৯ পরিবার লেবুর চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকার চাকা সচল করে চলছে। এ ৫ গ্রামের প্রতি বাড়িতে লেবু বাগান রয়েছে।
বাড়ির উঠোন আঙিনা যেখানেই ফাঁকা জায়গা রয়েছে, সেখানে লাগানো হয়েছে লেবু গাছ। শুরুতে নিজেদের পরিবারের চাহিদা মেটানোর উদ্দেশ্যে লেবু চাষ করা হয় । অল্প খরচে বেশি উৎপাদন ও অধিক লাভজনক হওয়ায় আস্তে আস্তে লেবু চাষের বিস্তৃতি বাড়তে থাকে। এর পর শুরু হয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষ। ৮/১০বছর আগ থেকে চাষ শুরু হওয়া গ্রাম গুলোতে এখন রীতিমত অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে। বর্তমানে এ ৫ গ্রামের শত শত পরিবার লেবু চাষের উপর নির্ভরশীল। এখানকার চাষীরা সীডলেস, এলাচি, কলম্বো, জারা ও আশা কাগজী জাতের লেবু চাষ করে থাকে। চাষীরা জানান, সাধারনত বছরে আশ্বিন মাসে লেবুর চারা রোপন করা হয়। এরপর ইউরিয়া, টিএসপি, পটাশ ও জৈব সারসহ পানি সেচ দেওয়া হয়। চারা বপনের দুই বছর পর ফলন শুরু হয়। প্রতি বিঘায় লেবু চাষ করতে সবকিছু মিলে প্রায় ৩০/৪০ হাজার টাকা খরচ হয়। এক বিঘা জমিতে বছরে আনুমানিক ৫০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করা হয়। একবার লেবু বাগান করলে ১০/১২ বছর সেখান থেকে ফলন পাওয়া যায়। সে হিসাবে ২ বছরে উৎপাদন খরচ উঠে যায়। ৩য় বছর থেকে লাভ পাওয়া যায়। সাধারনত বছরের ফাল্গুন, চৈত্র মাসে লেবুর মৌসুম হলেও বছরের প্রায় বারো মাসই কম বেশি লেবু তোলা হয়। উৎপাদিত এসব লেবু স্থানীয় বাজার এবং জেলার চাহিদা মিটিয়ে ঢাকার কাওরান বাজারে বিক্রি হয়ে থাকে। বাগান থেকে লেবু তোলার পর বাছাই করে বড়, মাঝারি, ছোট ও কেট এই চার ভাগে ভাগ করা হয়। লেবুর মৌসুমে প্রতিটি লেবু ৪/৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে স্থানীয় পাইকাররা জানান।
রহমতপুর গ্রামের লেবু মুন্সী জানান, ৭/৮ বছর আগে তিনি ১২ বিঘা জমিতে লেবু বাগান করেন। চারা রোপনের প্রথম বছর কিছু টাকা খরচ হয়। তারপর বাগান পরিচর্যা করার জন্য বিঘা প্রতি ১৫ হাজার টাকা করে খরচ হয়। এবার তিনি ৫ লাখ টাকার লেবু বিক্রি করেছেন বলে জানান। স্বল্প সময়ে ও কম পরিশ্রমে পরিশ্রম লেবু চাষে দীর্ঘ মেয়াদী অধিক মুনাফা লাভ করা যায় বলে তিনি বেকার যুবক যুবতীদের লেবু চাষে এগিয়ে আসার আহবান জানান।
ফটিকছড়ি উপজেলা কৃষি অফিসার লিটন দেব নাথ জানায়, ফটিকছড়িতে ২৫০ হেক্টর জমি/পাহাড়ীর এলাকায় ৫ শত বাগানে লেবুর চাষ হচ্ছে। এলাকার চাহিদা পূরণ শেষে দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে যাচ্ছে লেবু। এখানে সব চেয়ে বেশি সীডলেস লেবুর চাষ হচ্চে যা সারা বছর বিক্রি করা যায়।