বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছে চীন। আমি নতুন এসেছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতিনিধি, রোহিঙ্গাদের সাথে আলাপ করে এসমস্যা জানার চেষ্টা করেছি। দ্রুত এর একটি কার্যকারি সমাধান বের করা সম্ভব বলে আশাবাদী তিনি।
সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) দ্বিতীয় দিনের মতো রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন তিনি।
বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং এর নেতৃত্বে ৮ সদস্যের প্রতিনিধিদলটি সোমবার বেলা ১১ টার দিকে প্রতিনিধিদলটি টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পৌঁছান। এসময় তারা প্রত্যাবাসন ইস্যুতে রোহিঙ্গাদের সাথে কথা বলেন। এর পর প্রতিনিধি দলটি নয়াপাড়ার মোচনী ক্যাম্প পরিদর্শন করেন।
বিকালে কক্সবাজার শহরে ফিরে প্রতিনিধিদলটি গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে আলাপ করেন।
এদিকে, টেকনাফের নয়াপাড়া শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনের সময় চীনের প্রতিনিধিদল ২০জন রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ ও রোহিঙ্গা নেতাদের সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করেছেন। এসময় রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের জন্য নানাভাবে আশ্বস্ত করেছে চীনের প্রতিনিধিরা। রোহিঙ্গাদের রাখাইনে ফিরে যেতে বার বার অনুরোধ করেছেন চীনের এই প্রতিনিধিদল।
নয়াপাড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রোহিঙ্গা মাঝি গুরা মিয়া ও মোহাম্মদ জসিম জানিয়েছেন, ‘ চীনের প্রতিনিধিদল আমাদের সব দাবি দাওয়া শুনেছেন। প্রতি উত্তরে চীনের চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং রোহিঙ্গাদের জন্য দুটি প্রস্তাব দেন। একটি হলো- রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দলের সবাইকে জনপ্রতি দুটি করে মোবাইল সেট দেওয়া হবে। একটি নিজে সেদেশে যাওয়ার সময় নিয়ে যাবেন, অন্যটি এখানে পরিবারের কাছে রাখবেন। যদি মিয়ানমারে পরিস্থিতি ভালো হয়, মোবাইলে পরিবারকে সেদেশে ডেকে নিয়ে যাবেন। আরেকটি হলো- প্রতিনিধি দল মিয়ানমারে গিয়ে অবস্থা দেখে ঘুরে চলে আসবেন।যদি সেখানের অবস্থা ভালো দেখে আসেন তাহলে পরিবার নিয়ে মিয়ানমারে ফেরত যাবেন। এতে রোহিঙ্গারা সম্মতি দিয়েছেন’।
দুপুর ১টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফের শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে ওই রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের তিনটি বাসায় যান চীনের প্রতিনিধিরা। তারা রোহিঙ্গাদের ঘর ঘুরে দেখেন, পরিবারের লোকদের সঙ্গে কথা বলেন এবং কিছু স্কুল ব্যাগ ও ফুটবল তুলে দেন।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে চীনের রাষ্ট্রদূত টেকনাফের কেরুনতলী ট্রানজিট ঘাট পরির্দশন করেন।
শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (অতিরিক্ত) শামসুদ্দৌজা নয়ন জানিয়েছেন, প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশের সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে। প্রত্যাবাসন জেটি ঘাটে দাঁড়িয়ে নিজের ফোনে ওই এলাকার ছবি তোলেন চীনের রাষ্ট্রদূত। এ সময় তার সঙ্গে নয়াপাড়া শরণার্থী রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ (সিআইসি) আব্দুল হান্নান, জাদিমুড়া ও শালবাগান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ইনচার্জ মোহাম্মদ খালিদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এর আগে ৮ সদস্যের এ প্রতিনিধি দল রোববার কক্সবাজার আসেন।
গত রোববার বান্দরবানের ঘুমধুমের তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তে জিরো লাইনের রোহিঙ্গা ক্যাম্পে পরিদর্শন করেন এবং প্রত্যাবাসন ইস্যুতে বেশ কয়েকজন সাধারণ রোহিঙ্গার সাথে কথা বলেন। এরপর তারা ঘুমধুম বাংলাদেশ-মিয়ানমার মৈত্রী সেতুর জিরো পয়েন্ট পরিদর্শন করেন ও মিয়ানমারের কয়েকজন বিজিপি সদস্যের সাথে কথা বলেন।