বিলস কার্যক্রম ও চট্টগ্রাম

পাহাড়ী ভট্টাচার্য
CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন

“We are not so big that we can make a change overnight, we are not so small that we cannot initiate a change.”

-Nazrul Islam Khan, Secretary General, BILS.


বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক শ্রমিক আন্দোলনকে সুসংহত, স্বনির্ভর ও ঐক্যবদ্ধ করতে সহায়তা প্রদান এবং জাতীয় পর্যায়ে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলনের উজ্জ্বল ভাবমুর্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলস প্রতিষ্ঠিত হয়।

একটি শিক্ষা ও গবেষণামূলক প্রতিষ্ঠান হিসাবে বিলস র্দীঘ দু’দশক-এর ও অধিক সময়কাল ধরে বাংলাদেশের শ্রমজীবি জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়ন, দেশের প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক সকল শিল্প সেক্টরে শ্রমআইন ও ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার কার্যকর, শ্রমিকের পেশাগত স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণও বিদ্যমান কর্ম পরিবেশের উন্নয়নসহ শোভন কাজ ও সামাজিক ন্যায়-বিচার নিশ্চিতকরণকল্পে জাতীয় ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন সমূহের সহযোগীতায় শিক্ষা, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, প্রচার ও প্রকাশনা সহ নানামাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে চট্টগ্রামে বিলস-এর শ্রম ইস্যুতে সীমিত আকারের কার্যক্রম থাকলেও ২০১০ সালে ঝুঁকিপূর্ণ জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় চট্টগ্রামের ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্বের সমন্বয়ে “জাহাজ-ভাঙ্গা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন ফোরাম” গঠন ও ডেনমার্কের ট্রেড ইউনিয়ন জোট ডিটিডিএ (সাবেক এলও-এফটিএফ কাউন্সিল)-এর সহায়তায় ভাটিয়ারীতে একটি “ইনফরমেশন এন্ড ট্রেনিং সেন্টার” স্থাপনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামে আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
দেশের ভৌগলিক অবস্থান ও বাণিজ্যিক-অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রামের রয়েছে একটি স্বতন্ত্র অবস্থান। এখানে রয়েছে গভীর সমুদ্র বন্দর, পূর্বাঞ্চল রেলের সদর দপ্তর, পাট, চা, তৈল শোধনাগার, কেমিক্যাল, সুতা, কাগজকল, রপ্তানীমুখী তৈরী পোষাক, নির্মাণ, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, হেলথ-ডায়াগনষ্টিক সেন্টার, জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্প, মৎস্য, লবন, সিমেন্টসহ নানা বৈচিত্রময় শিল্প-কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কর্মরত শ্রমিক ও তাদের পরিবারের সদস্যদের অধিকার সুরক্ষা ও ট্রেড ইউনিয়ন কর্মকান্ড শক্তিশালী করতে বিল্স, জার্মান ট্রেড ইউনিয়ন কনফেডারেশনের সহযোগী সংস্থা “ডিজিবি-বিল্ডাংস ওয়ার্ক বান্ড” এর সহযোগিতায় ২০১৬ সালে “লেবার রিসোর্স এন্ড সাপোর্ট সেন্টার-(এলআরএসসি)” স্থাপন করে অদ্যাবধি শ্রমজীবি জনগোষ্টীর জীবনমান উন্নয়নে বহুমাত্রিক কার্যক্রম পরিচালনা অব্যহত রেখেছে।
স্মর্তব্য, দেশের শ্রমিক কর্মচারীদের স্বার্থের প্রতিনিধিত্বশীল শীর্ষ সংগঠন শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (ষ্কপ্) ’৯০ এর দশকে একটি নেতৃস্থানীয় ও উল্লেখযোগ্য ভ’মিকা পালন করলেও, পরবর্ত্তীতে, কালের পরিক্রমায়, রাষ্ট্রীয়-র্আথ-সামাজিক পট পরিবর্তন এবং ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন ও সাংগঠনিক কর্মকান্ডে তুলনামূলক স্থবিরতা ও একটি শ্লথগতি দৃশ্যমান হতে থাকে। চট্টগ্রামের শ্রমজীবিদের স্বার্থের পক্ষে সমন্বিতভাবে র্দীঘদিন দাড়ানো ও ভূমিকা পালনের নিমিত্তে কোন উল্লেখযোগ্য প্লাটর্ফম ছিল না। চট্টগ্রামে বিলস কার্যক্রম এক্ষেত্রে একটি গ্রহনযোগ্য প্লাটর্ফম এবং একই সাথে ক্যাটালিষ্ট বা অনুঘটকের ভুমিকায়ও অবতীর্ণ হতে সক্ষম হয়েছে।
চট্টগ্রামে ট্রেড ইউনিয়ন নেতৃত্ব, সংগঠন ও কর্মীদের মধ্যে একটি নিয়মিত যোগাযোগ সৃষ্টি, পারষ্পরিক আন্ত:সর্ম্পক পুণ:স্থাপন ও অব্যহত রাখা, ইস্যূ-ভিত্তিক যৌথ কর্মসূচি পালনের মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামের শ্রমজীবি মানুষের অধিকার ও স্বার্থের স্বপক্ষে দাড়ানো, শ্রমিকের সার্বিক সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ সহ সামগ্রিকভাবে শ্রমিক-বান্ধব একটি যৌথ প্লাটফর্ম হিসাবে বিল্স অদ্যাবধি চট্টগ্রামে সবিশেষ ভুমিকা পালন করছে।
চট্টগ্রামে বিলস কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় জাহাজ-ভাঙ্গা শিল্পের শ্রমিকদের নিয়ে আজ ১৩টি ইয়ার্ড-কেন্দ্রিক ট্রেড ইউনিয়ন গঠিত হওয়া, তৈরী পোষাক, নির্মাণ, হোটেল-রেষ্টুরেন্ট, হেলথ-ডায়াগনিষ্টিক, মৎস্য-আহরণ, বন্দর ও রেল সেক্টরে কর্মরত শ্রমজীবিদের মধ্যে সাংগঠনিক ও ট্রেড ইউনিয়ন কার্যক্রমে অধিকতর গতিবৃদ্ধি, ভুক্তভোগী অসহায় শ্রমিকদের আইন ও পরামর্শ সহায়তা, শ্রম-ইস্যূতে চট্টগ্রামের প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়াতে সংবাদ, চিঠি, ফিচার, প্রতিবেদন সহ অনুরূপ সংবাদ-ভাষ্য প্রকাশ ও প্রচারের তুলনামূলক মাত্রা-বৃদ্ধি, চট্টগ্রাম-ভিত্তিক শ্রম সংবাদ সমূহ সংকলিত করে বিল্স-এর উদ্যোগে প্রেস ক্লিপিংস ও ত্রৈমাসিক সংবাদ বুলেটিন প্রকাশ, বিবিধ ইস্যূতে লিফলেট, পোষ্টার, সংকলন, গবেষণা-পত্র প্রকাশ ও সংশ্লিষ্টদের মধ্যে বিতরণ, শ্রম-ইস্যূতে চট্টগ্রাম-ভিত্তিক স্টুডেন্ট ইর্ন্টানশিপ কার্যক্রম পরিচালনা কতিপয় উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম। এছাড়া, ট্রেড ইউনিয়ন ও শ্রম ইস্যুতে চট্টগ্রামের শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সংবাদ সম্মেলন, শ্রমিক সংগঠন ও সুশীল সমাজের অংশগ্রহনে গোলটেবিল বৈঠক, সভা-সেমিনার, চট্টগ্রামে প্রতিবছর পেশাগত স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা মেলার আয়োজন-কতিপয় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি। পাশাপাশি, বিবিধ জাতীয়-আর্ন্তজাতিক ফোরামে চট্টগ্রামের শ্রমিক নেতৃবৃন্দের প্রতিনিধিত্ব ও অংশগ্রহন বৃদ্ধি ও একটি সাম্প্রতিক অগ্রগতি।
আজ চট্টগ্রামে সরকারী প্রতিষ্ঠান, মালিক-শ্রমিকদের প্রতিনিধিত্বশীল সংগঠনসমূহের মধ্যে একটি তুলনামূলক সৌর্হাদ্যপূর্ণ আন্ত:সর্ম্পক বিরাজমান যার নেপথ্যে বিল্স-এর বিগত প্রায় ১ দশকের কার্যক্রম ও ধারাবাহিকতা সবিশেষ ভূমিকা রেখেছে।
বিলস কার্যক্রম বিশেষত: শ্রমিকের জন্য শোভন কাজ, তার জীবন-মান উন্নয়নে কার্যকর ইতিবাচিক ভূমিকার ধারা বজায় রাখা বৃহত্তর স্বার্থেই অত্যাবশ্যক । এ উপলব্ধি ও সংশ্লিষ্ট সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা তথা উদ্যোগ চট্টগ্রামে একটি গণতান্ত্রিক, সন্তোষজনক শ্রম-ব্যবস্থাপনা বিনির্মানে অদুর ভবিষ্যতে সক্ষম হবে বলে মনে করি।

পাহাড়ী ভট্টাচার্য : সিনিয়র অফিসার, বিলস।