দালালদের দৌরাত্ম্যে বিদেশ গমনেচ্ছুদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সফল হচ্ছে না জানিয়ে সচিব রৌনক জাহান বলেছেন, এই দালালদের নিবন্ধিত করে তাদের কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনা হবে।
‘অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে করণীয়’ নিয়ে রোববার এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
‘অভিবাসী নারী শ্রমিকদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে করণীয়’ নিয়ে রোববার এক মতবিনিময় সভায় তিনি একথা বলেন।
বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় সুফিয়া কামাল ভবনে এই সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ।
সম্প্রতি ১৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক অবৈধভাবে ব্রুনাইয়ে গেছে জানিয়ে রৌনক জাহান বলেন, “সেখানে আমাদের ৫ হাজারের মতো শ্রমিক বৈধ উপায়ে গেছে। কিন্তু ১৫ হাজারেরও বেশি শ্রমিক সেখানে গিয়ে আমাদের শ্রম বাজার নষ্ট করে দিচ্ছে।”
প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের বিএমআইটি, আইএমটি ও টিটিসি থেকে বিদেশে গমনেচ্ছু শ্রমিকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা থাকলেও অধিকাংশ শ্রমিক তা নিতে চান না বলে জানান সচিব রৌনক জাহান।
এর কারণ তুলে ধরে তিনি বলেন, “দালালরা তাদের বোঝাচ্ছে যে, এই ট্রেনিং তাদের না নিলেও চলবে। আমরা আমাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের কথা ইউনিয়ন পরিষদ পর্যন্ত গিয়েও বলছি। কিন্তু তারা আমাদের কথা শুনলেই ভাবে, আমরা তাদের নিরুৎসাহিত করছি।”
সে কারণে দালালদের নিবন্ধন করে তাদের কার্যক্রম নজরদারির আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পাশাপাশি কোন গ্রাম থেকে কতজন শ্রমিক দেশের বাইরে যাচ্ছেন তার তালিকা দিতে ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে জানান সচিব।
“জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে টাক্সফোর্স গঠন করে দালালদের কার্যক্রম মনিটর করা হচ্ছে,” বলেন তিনি।
জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর পরিচালক নুরুল ইসলাম জানান, ২০১৮ সালে অভিবাসী শ্রমিকদের ৬০০টি সমস্যার সমাধান করা হয়েছে। আড়াই কোটি টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে দালালদের কাছ থেকে।
প্রতিটি উপজেলা থেকে গড়ে প্রশিক্ষিত এক হাজার তরুণ-তরুণীকে বিদেশে পাঠানোর যে নির্দেশনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিয়েছেন, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এখন সে লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে বলে জানান তিনি।
রৌনক জাহান বলেন, পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে প্রশিক্ষিত কর্মী পাঠানোর বিষয়ে মনোযোগ দিয়েছেন তারা। তবে এবার গৃহকর্মী নয়, প্রযুক্তি ও টেক্সটাইল শিল্পে দক্ষ কর্মী পাঠানোয় গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
২০০৩ সালে সরকার আংশিক ও স্বল্প দক্ষ নারীদের অভিবাসনের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৯১ থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত অভিবাসীদের মধ্যে নারী অভিবাসীদের শতকরা হার ছিল মাত্র ১ শতাংশ। কিন্তু ২০০৩ সালে নারী অভিবাসন বিষয়ে নীতিমালায় পরিবর্তনের কারণে ২০০৯ সালে নারী অভিবাসীদের হার উন্নীত হয় ৫ শতাংশে।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ জানিয়েছে, ২০১৮ সালে বাংলাদেশ থেকে ৭ লাখ ৩৪ হাজার ১৮১ জন অভিবাসী যে দেশের বাইরে গিয়েছেন, তাদের মধ্যে নারীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১ হাজার ৬৯৫ জন, শতকরা হিসেবে যা ৭ শতাংশ।
গত তিন বছরে অভিবাসী নারী শ্রমিকদের কাছ থেকে ৫ হাজার অভিযোগ এসেছে বলে জানায় মহিলা পরিষদ।
সভার পরিপত্রে বলা হয়, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো নির্যাতিত নারী শ্রমিকদের কোনো সহযোগিতা করে না। সৌদি আরব আইএলও সনদের ১৮৯ নং অনুচ্ছেদে (অভিবাসী গৃহকর্মীদের ন্যূনতম অধিকার সংরক্ষণ বিষয়ে) অনুস্বাক্ষর না করায়, সেখানে নারী কর্মীদের সুরক্ষা হুমকির মুখে রয়ে গেছে।
প্রবাসে নারী শ্রমিকদের অধিকার সুরক্ষায় ১১টি সুপারিশ তুলে ধরে মহিলা পরিষদ।
মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নারী শ্রমিক পাঠানোর আগে তাদের নিরাপত্তার বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিতে বলেছে তারা। পাশাপাশি অবৈধ নিয়োগকারী এজেন্সির বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ এবং অভিবাসীদের তথ্য সংরক্ষণের জন্য দূতাবাসে ডেটাবেইস খোলার আহ্বান জানানো হয়েছে।