প্রতি বিভাগে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করা হবে: প্রধানমন্ত্রী

CPLUSTV
CTG NEWS
CPLUSTV
শেয়ার করুন
স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে দেশের প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করার ঘোষণা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সকালে গাজীপুরে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালিস্ট হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজে প্রথম স্নাতক সমাপনী অনুষ্ঠানে তিনি এই ঘোষণা দেন।

২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর মালয়েশীয় প্রতিষ্ঠান কেপিজের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের যৌথ উদ্যোগে এ হাসপাতালের যাত্রা শুরু হয়। এর নামকরণ হয় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের নামে, যিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মা।

শেখ হাসিনা বলেন, “বাংলাদেশের কোথাও মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ছিল না। মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরাই প্রতিষ্ঠা করি। কিন্তু এটা করতে গিয়ে অনেক বাধা পেতে হয়েছিল। তারপরও আমরা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলাম। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও সিলেটে আরও তিনটা মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় করে দিয়েছি।

“পর্যায়ক্রমিকভাবে প্রতিটি বিভাগে একটি করে মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আমরা করে দেব।”

আগামীতে গাজীপুরে একটা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর জন্য ইতোমধ্যে জায়গা নেওয়া হয়েছে।

নার্সিংকে ‘সম্মানজনক’ পেশা হিসেবে বর্ণনা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের দেশে নার্সিংটা সব সময় অবহেলিত ছিল। নার্সিংয়ের মতো একটা সেবামূলক পেশা যে পেশাটাকে আমি মনে করি সবচেয়ে সম্মানজনক একটা পেশা। একজন অসুস্থ মানুষ-তার পাশে দাঁড়ানো, তার সেবা করা, তাকে রোগমুক্ত করা, তার পাশে থাকা এর থেকে বড় সেবা আর কী হতে পারে!”

নার্সিং পেশার উন্নয়নে নেওয়া পদক্ষেপ তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, “আমাদের ডিপ্লোমা নাসিংয়ের উপর আর কিছু ছিল না, শুধু ডিপ্লোমা নার্সিং ট্রেনিং দেওয়া হত। খুব স্বাভাবিকভাবে আমরা পদক্ষেপ নেই শুধু ডিপ্লোমা নার্সিং না এখানে গ্রাজুয়েশন হবে। এমনকি নার্সরা পিএইচডি করবে এবং তারা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হবে। নিজেদের গড়ে তুলবে। সেই সাথে সাথে তাদের চাকরির যে সীমাটা ছিল নিচু শ্রেণিতে, সেটাও আমরা আপগ্রেড করে দিলাম।

“অর্থাৎ মর্যাদাটা বাড়িয়ে দিলাম। কারণ মর্যাদাটা না বাড়ালে আমি জানি অনেকেই এই পেশায় আসবে না। যে সমস্ত মেডিকেল কলেজ আছে, হাসপাতাল আছে আমরা অনুমতি দিয়েছি নার্সিং কলেজ করার জন্য। যত বেশি নার্স আমরা তৈরি করতে পারব আমাদের দেশের চাহিদা যেমন পূরণ হবে, বিদেশেও তাদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।”

স্বাস্থ্য সেবার উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার জন্য যা যা প্রয়োজন সেগুলো আমরা করে যাচ্ছি। দিনে দিনে এটা আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে।”

সারা দেশে ১৮ হাজার কমিউনিটি ক্লিনিক করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করেন তিনি।

বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন,  “৯৬ সালে কমিউনিটি ক্লিনিকগুলো যখন করেছিলাম ২০০১ সালে বিএনপি-জামাত জোট যখন ক্ষমতায় আসল তারা সেগুলো বন্ধ করে দিল। তাদের বন্ধ করার একটা যুক্তি ছিল। কমিউনিটি ক্লিনিক থেকে আমরা বিনা পয়সায় চিকিৎসা দিতাম। বিনা পয়সায় ওষুধ দিতাম। তাদের কথা ছিল এ কমিউনিটি ক্লিনিক চালু হলে সবাই নাকি আমাকে ভোট দেবে নৌকা মার্কায়। সেই ভয়ে কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করে দেওয়া হল।

“যারা রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন তাদের তো মানুষের ভালো-মন্দ দেখতে হবে। মানুষের সেবা করতে হবে। মানুষের জন্য কী করতে পারলেন সেটাই তাদের জন্য বিবেচ্য বিষয় হবে এবং সেই সেবা দিয়ে মানুষের মন জয় করতে হবে। সেটা না করে মানুষ যেখানে সেবা পেতে শুরু করেছিল সেটা তারা বন্ধ করে দিল।”

এরপরে আর কেউ সরকারে এসে যাতে চট কমিউনিটি ক্লিনিক বন্ধ করতে না পারে সেজন্য এগুলো ট্রাস্টের আওতায় আনার কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মেমোরিয়াল কেপিজে স্পেশালিস্ট হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিং কলেজ ওই অঞ্চলের সবচেয়ে সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে বলে আশা প্রকাশ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, “প্রথম দিকে উন্নত বিল্ডিং দেখে স্থানীয় লোকেরা ভয় পেত। ভাবত এখানে আসবে কি না। এখানে আসলে বোধ হয় কত টাকা লাগবে। কী হবে না হবে।

“আমরা কেপিজের সাথে যেই চুক্তি করেছিলাম সেখানে তাদের বলেছি, আমরা আমাদের ট্রাস্টের থেকে কোনো প্রফিট চাই না। আমরা এইটুকু চাই-সেবা। এই অঞ্চলের মানুষ বিশেষ করে শ্রমিকরা এখানে সবচেয়ে বেশি। তারা যেন চিকিৎসা সেবাটা ভালোভাবে পায় সেটাই আমরা নিশ্চিত করতে চাই।”

অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের সহ-সভাপতি শেখ রেহানা, স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিমসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।