নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পুকুর ভরাট নিয়ে সিপ্লাসটিভি গত ৭ই সেপ্টম্বর ‘আইন অমান্য করে নগরীতে চলছে কৌশলে পুকুর ভরাটের মহোৎসব’ শিরোনামে ও গত ১০ সেপ্টম্বর ‘আইন অমান্য করে চলছে প্রকাশ্যে পুকুর ভরাটের উৎসব’ শিরোনামে পরপর দুটি রিপোর্ট প্রচার করে । রিপোর্টগুলো বেশ দর্শক জনপ্রিয়তা পায় এবং বিপুল পরিমান দর্শক বিভিন্ন মাধ্যমে সিপ্লাসটিভিকে ধন্যবাদ জানায় পাশাপাশি দর্শকরা মন্তব্য করেছিলেন, এইসব ভালো কাজে নেতাদের ভুমিকা প্রায় সময় অন্যায়কারীদের পক্ষে হয়।তাহলে সিপ্লাসের এই ধারাবাহিক রিপোর্টে চট্টগ্রামের নেতারা কতটুকু ভুমিকা রাখবে? এইসব প্রশ্ন নিয়ে চট্টগ্রামের জনপ্রিয় নেতাদের পরামর্শ কি? এসব প্রশ্ন নিযে পুকুর রক্ষায় এবার সিপ্লাসটিম মুখোমুখি হয়েছে মেয়র ও চট্টগ্রামের রাজনীতিবিদদের সাথে।
তারা সকলেই নগরবাসীকে পুকুর খেকোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে পরিবেশের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পুকর বাঁচাতে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন। পাশাপাশি পরিবেশ অধিদপ্তরকে পুকুর রক্ষায় আরো কঠোর ও তৎপর হওয়ার পরামর্শ প্রদান করেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন সিপ্লাসকে বলেন,
‘পুকুর ভরাট খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।পুকুররের গুরুত্ব কতটুকু সেটা নগরবাসী হিসাবে আমরা উপলব্ধি করতে পারি না।যখন কোন দূর্ঘটনা ঘটে তখন বুঝতে পারি আসলে পুকুরের গুরুত্ব কতটুকু। তখন আর কিছুই করার থাকে না।পুকর ভরাট এখন প্রকাশ্যে না করে, ড্রেনের ময়লা আবর্জনা,ধুলাবালি ফেলে ধীরে ধীরে পুকুর ভরাট করে ।যা সচরাচর চোখে পড়েনা।এ ব্যাপারে সিটি কর্পোরেশনে কোন অভিযোগ আমরা পরিবেশ অধিদপ্তরে পাঠায়।পরিবেশ অধিদপ্তর পুকুর রক্ষায় আরো সচেতন ও কঠোর হওয়ার দরকার। নগরবাসীকে বহুবিধ ব্যবহারের উপকরণ পুকুর রক্ষায় অনুরোধ করেন’।
চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয়বাদী দলের সাধারন সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর সিপ্লাসকে বলেন,
‘আগে আমরা বিভিন্ন জায়গায় দিঘী ও পুকুর দেখতাম। এখন পুকুর ও দীঘি তেমন একটা দেখা যায়না।কৌশলে দিনে দিনে ভরাট হয়ে যাচ্ছে।পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ছাড়া পুকুর ভরাটের কোন সুযোগ নেই তারপরও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়ে, নয়তো তাদের অগোচরে প্রতিনিয়ত পুকুর ভরাট হচ্ছে।তদারকি সংস্থা পরিবেশ অধিদপ্তরের অগোচরে কিংবা যোগসাজসে পুকর ভরাট হয়ে যাচ্ছে এটা মারাত্মক আকার ধারণ করবে। যেইভাবে হোক পুকর ভরাট বন্ধে পরিবেশ অধিদপ্তরের এখনি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত’।
চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি সোলায়মান আলম শেঠ সিপ্লাসকে বলেন,
‘পুকুর মানুষের প্রয়োজনীয় উপাদান।এক সময় আমরা পুকুরে সাতার কাটতাম,পুকুরের তাজা মাছ খেতাম।এখন এই রীতি ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হয়ে যাচ্ছে।নগরীতে সুন্দর সুন্দর পকুর ও দীঘি ছিল, আজ পর্যন্ত আসকার দীঘি অর্ধেক ভরাট হয়ে গেছে।বিশেষ করে শেখ বাপের পুকুর প্রায় পুরাটা ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এইভাবে পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়াতে পুকুরে মানুষ এখন আর গোসল ও সাতার কাটতে পারেনা। সুইমিংপুলে বৃত্তবানদের ছেলে মেয়েরা গোসল ও সাতার কাটে। পুকুর রক্ষায় তা চিহ্নিত করে, প্রয়োজনে সাইনবোর্ড লাগিয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া দরকার’।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপাতি খোরশেদুল আলম সুজন সিপ্লাসকে বলেন,
‘পুকুর জীবনের একটি অংশ আজকে পুকুর ভরাট হয়ে যাওয়ার কারনে একটু বৃস্টিতে হাঁটু পরিমাণ জল হয়।পুকুর রক্ষায় প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে না আসলে বাকী পুকুরগুলোকে রক্ষা করা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।শুধু সরকারের দিকে না তাকিয়ে, পুকুর ভরাটকারীর বিরুদ্ধে সবার দরকার সামাজিকভাবে সোচ্চার ও প্রতিরোধ করা ।পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা ও শাস্তিই পারে পুকুর ভরাট বন্ধ করতে’।
চট্টগ্রাম মহানগর জাতীয়বাদী দলের সহ সভাপতি আবু সুফিয়ান সিপ্লাসকে বলেন,
‘জীবন ধারণের প্রধান একটি উপকরণ ছিল পুকুর।আধুনিক সময়ে এই নগরে চোখের সামনে পুকুর ভরাট হয়ে যেতে দেখেছি। মানুষের নিত্য নৈমত্তিক ব্যবহারের পাশাপাশি অগ্নিকান্ড ঘটলেও পুকুরের প্রয়োজন পড়ে।আজকে আমাদের ছেলে মেয়েরা সাতারকাটা ভুলে যাচ্ছে।পুকুর খেকো’র কালো থাবা থেকে থেকে যে কয়টি পুকুর হিসাবে চিহ্নিত ও বেঁচে আছে তা রক্ষা নগরবাসীর নৈতিক দায়িত্ব।পাশাপাশি দায়িত্বশীল সংস্থাকে আরো গতিশীল হতে হবে’।
চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান সিপ্লাসকে বলেন,
‘পুকুর,জলাশয় ভরাট করে বাড়ী ঘর যারা করছেন তারা নানাভাবে প্রকৃতির উপর অত্যাচার করছে।পুকুর,জলাশয় ও নালা ভরাট করার কারণে ব্যাপকভাবে জলাবদ্ধতা বেড়ে গেছে।মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে গেছে।আমাদের সকলের উচিত পুকর,নালা ও জলাশয় সংরক্ষন করা পাশাপাশি ভরাটে প্রতিরোধ গড়ে তোলা ।জনগনকে সচেতন হতে হবে, জনগণ সচেতন হলেই এই অন্যায়ের সলিল সমাধি হবে’।