বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারীতে পাহাড় কাটার মহোৎসবে পরিনত হয়েছে। পরিবেশ সংরক্ষণ আইনে পাহাড় কাটা নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারীতে প্রশাসনের কঠোর নজরদারিতেও থামছেনা পাহাড় কাটা। উল্টো বেড়েই চলছে একের পর এক পাহাড় কাটা ঘটনা।
সরজমিন পরিদর্শনে জানা গেছে, বাইশারী ইউনিয়নের লম্বাবিল আব্দুর জব্বর মৃত পিতা নাছির মোহাম্মদ কোন প্রকার অনুমতি না নিয়েই বাড়ী তৈরী উদ্দেশ্যে পাহাড় কেটে পরিবেশ ধ্বংস করছে।
স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে, ৭নং ওয়াড় মধ্যম বাইশারী মৃত জয়নাল আবেদীন প্রকাশ (জুনো ডিলার) এর পুত্র রাজামিয়া, বেশ কয়েকটি ড্যাম্পারের মালিক। লম্বাবিল, লম্বাবিল তিতার পাড়া, উত্তর বাইশারী, হলুদিয়া শিয়া বিভিন্ন জায়গায়, পাহাড় কেটে বিভিন্ন এলাকায় ফসলী জমি, দোকান ঘর, কলোনী ভরাটসহ বিভিন্ন স্থানে মাটি পাচার করছে।
জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলম কোম্পানী বলেন, পাহাড় কাটা সম্পর্কে আমার নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কোন প্রকার পাহাড় ও টিলা কাটা এবং খাল থেকে বালু উত্তোলন করা যাবে না। বাইশারী তদন্ত কেন্দ্রর অফিসার ইনচার্জ মোঃ লিয়াকত আলী বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর পাহাড় কাটা বন্ধে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাছাড়া পার্বত্য অঞ্চলে পাহাড় কাটা বিষয়ে জেলা প্রশাসনে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। পাহাড় কাটার অভিযুক্ত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
জানা যায়, এলাকার কয়েকটি স্থানে দীর্ঘদিন ধরে পাহাড় কাটা চলছে। পাহাড় কাটার কারণে বেশ কিছু বন জঙ্গল কাটা পড়ছে। ন্যাড়া হয়ে পড়েছে বিশাল এলাকা। এভাবে পাহাড় কাটা অব্যাহত থাকলে খুব শিঘ্রই পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়বে। কিন্তু এসব বন্ধে স্থানীয় প্রশাসন কোন ভুমিকা রাখছেনা।
অভিযোক্ত ড্যাম্পারের মালিক রাজামিয়া কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন” আমার ডাম্প্যার গাড়ির থাকলেও আমি পাহাড় কাটায় জড়িত নেই। গতকিছু দিন আগে পাহাড় কাটার জরিমানা ও মামলা হয়েছিল তার মধ্যেও আমি ছিলাম না। আমি এক জন খেটে খাওয়া মানুষ ছিলাম, জঙ্গলে গিয়ে গাছের ছাল কেঁটে বাজারে বিক্রি করে আমি আমার সংসার চালাতম। আজ আমি কোটিপতি। প্রশাসন আমার হাতের মুঠে। আমি যা বলব তাই করবে। আমাকে কেউ কিছু করতে পারবে না” বলে তিনি জানান।
জানা গেছে, রাজামিয়া নেতৃত্বে ১০ থেকে ১২জন শ্রমিক কোদাল ও বেলচা ব্যবহার করে মাটি কেটে ভরাট করছে ড্যাম্পার। দিন দিন বেড়েই চলছে বাইশারী ইউনিয়নের পাহাড় কাটা। এতে পাহাড়ের নিচে বা আশে পাশে যারা বসবাস করছে তারা খুব ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে। এতে যেকোন সময় পাহাড় ধ্বসে বড় ধরনের দূর্ঘটনা ও প্রাণহানী আশংকা বিরাজ করছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে বড় কোন কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় প্রশাসনের ভুমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন পরিবেশবাদীরা।
স্থানীয়রা বলেন, রাজামিয়া টাকা দিয়ে সব কিছু করতে পারেন, তিনি কোন কিছু মানছেন না কেন। পাহাড় কাটা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। এই কার্যক্রম পরিচালনা ক্ষমতা সরকার কাউকে দেয়নি। তাছাড়া পরিবেশ আইনে পাহাড় কাটার জন্য কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আইনে বলা আছে। তবুও কার শক্তিতে পাহাড় কাটা থামছে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি’র নিকট জানতে চাইলে তিনি পাহাড় কাটা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থ গ্রহণ করা হবে বলে জানান।