মুষলধারে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে দমকা হাওয়ায় টেকনাফ উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রাম পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ১০ হাজারের বেশি মানুষ পানি বন্দি হয়ে আছে। তবে পৌরসভার ভুক্তভোগীদের দাবি খাল দখলের কারনে পৌর তাদের বাড়ি-ঘর পানিতে তলিয়ে গেছে।
এছাড়া উপজেলার অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর-বাড়ি বিধ্ব¯Í হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। এদিকে মঙ্গলবার সকাল থেকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জনগণকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হয়েছে।
১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার সরেজমিনে টেকনাফ পৌরসভার, হ্নীলা, বাহারছড়া, সাবরাং, হোয়াইক্যংয়ের স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মুষলধারে বৃষ্টির পানিতে প্রায় শতাধিক গ্রামের হাজার মানুষ পানি বন্দী হয়ে আছে। এতে একই দিন সকাল থেকে বিকেল এসসব এলাকা ঘুরে দেখেছেন টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল হাসান ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মোহাম্মদ শাহীন প্রমুখ।
পরির্দশনকালে টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ রবিউল হাসান বলেন, টানা বৃষ্টিতে স্থানীয়দের ঘর বিধ্বস্ত ও পানিতে তলিয়ে গেছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থদের শুকনো খাবার দেওয়া হবে। তাছাড়া বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে যাওয়ার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে।
এদের তালিকা করা হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি স্থানীয়দের বরাত দিয়ে বলেন, পৌরসভার কিছু প্রভাবশালীরা খাল দখল করে রাখায় পানি জমিয়ে গ্রামে ঢুকে পরে। এতে স্থানীয়দের বাড়ি-ঘর পানিতে নিচে তলিয়ে গেছে। খাল দখলকাররিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পৌরসভার বাসিন্দা মোবারক মিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে হোছেন আহম্মদ, আবদুল হক, মা-করিম, শফিউল্লাহসহ বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী খাল দখল করে রেখেছে। এতে বৃষ্টি পানি জমাত হয়ে এলাকা ঢুকে পানির নিচে তলিয়ে গেছে। আগের বৃষ্টিতে এ ভাবে এলাকা তলিয়ে ঘরবাড়ি যায়নি। তাদের ঘরসহ এলাকার বেশ কয়েকটি কাঁচা ঘর ভেঙে গেছে।
তিনি আরো বলেন, খাল দখল মুক্ত না হওয়ায় প্রতি বছর বৃষ্টিতে শতাধিকের বেশি পরিবার পানি নিচে বসবাস করতে হয়। খাল দখলমুক্ত করে এলাকার লোকজনকে পানি বন্দী থেকে রক্ষা করে খাল দখলকারিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন দাবি জানাচ্ছি সরকারের কাছে। এছাড়া পৌরসভার ভেতরে বেশ কয়েকটি ওর্য়াড পানিতে তলিয়ে গেলেও কোন জনপ্রতিনিধি দেখতে আসেনি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা দিলদার বেগম (৫৫) নামে এক বৃদ্ধ নারী বলেন, টানা বৃষ্টিতে একমাত্র সহায় সম্বল ঘর বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। জানিনা এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো। একটি মাত্র আশ্রয় কেন্দ্র হারিয়ে এখন শুন্য হয়ে পরে আছি। সকাল থেকে পরিবার কোন লোকজন খবার মুখে দেয়নি। খাল দখরে কারনে আমাদের এই দশা । তার জন্য পৌরকৃতপক্ষ দায়ি। এখন থেকে পৌরসভার কোন জনপ্রতিনি তাদের দেখতে আসেনি।
টেকনাফ হ্নীলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রাশেদ মোহাম্মদ আলী বলেন, আমার এলাকায় প্রায় হাজার মানুষের ঘর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। তাদের খোঁজ খবর নেওয়া হয়েছে। টেকনাফ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আলম জানিয়েছেন, গুটা উপজেলায় অর্ধশতাধিক গ্রাম পানির নিচে তলিয়ে গেছে। এছাড়া তার এলাকায় বেশ কিছু বাড়ি বিধ্বস্ত হয়ে ১৫ জন আহত হয়েছে। এলাকায় পানের বরজ, বীজতলাসহ ব্রিজ, কালভার্ট ও ২০ কিলোমিটারেরও বেশি গ্রামীণ সড়ক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।
তিনি বলেন, হাজারো মানুষ পানিবন্দী হয়ে আছে। পানি বন্দি মানুষদের আশ্রয় কেন্দ্র চলে আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা করে সাহায্য করা হবে।