চলতি বছরের এপ্রিল থেকে বন্ধ রয়েছে গেজেটধারী ২১৮৮ জন মুক্তিযোদ্ধার ভাতা। এদের অনেকের নাম লাল মুক্তিবার্তায়ও রয়েছে। যাচাই-বাছাই কমিটি ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ আখ্যা দিয়ে গেজেটসহ সনদ বাতিল করার সুপারিশ করায় ‘গ’ তালিকাভুক্ত এসব মুক্তিযোদ্ধার ভাতা বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক।
এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিকার চেয়ে মন্ত্রণালয়ে আপিল আবেদন করেছেন ভুক্তভোগীরা, যার শুনানি আগামী মাসে শুরু হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী বলেন, সারা দেশে কিছু গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ এসেছিল- তারা ‘অমুক্তিযোদ্ধা’। অভিযোগগুলো যাচাই-বাছাই করতে সংশ্লিষ্ট উপজেলায় পাঠানো হয়েছিল।
ওইসব ব্যক্তি বাছাই কমিটির সামনে নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সপক্ষে প্রয়োজনীয় তথ্য-প্রমাণ দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। ফলে কমিটি তাদের মাসিক সম্মানী ভাতা বন্ধ করে সনদ বাতিলের সুপারিশ করেছে। সে অনুযায়ী ভাতা বন্ধ রাখা হয়েছে। এদের মধ্যে যারা আপিল করেছেন তাদের শুনানি অক্টোবরে শুরু হবে।
যারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার সপক্ষে প্রমাণ দেখাতে পারবেন তাদের ভাতাসহ সরকারি সুযোগ-সুবিধা চালু করা হবে। যারা পারবেন না তাদের গেজেট ও সনদ বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করবে মন্ত্রণালয়।
মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পেতে নতুন এক লাখ ৩৪ হাজার আবেদন এবং প্রায় ৫০ হাজার গেজেটধারী মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে ‘অমুক্তিযোদ্ধা’ হওয়ার লিখিত অভিযোগের নিষ্পত্তি করতে ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে সারা দেশে ৪৭০টি উপজেলা যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে সরকার। এর মধ্যে ৩৮৫টি কমিটি তাদের প্রতিবেদন দেয়। বাকি ৮৫টি কমিটি সদস্যদের দ্বন্দ্ব ও কমিটি নিয়ে মামলা থাকায় কাজ করতে পারেনি।
যাচাই-বাছাই শেষে ‘উপজেলা, জেলা কিংবা মহানগর যাচাই-বাছাই কমিটি’ তিন ধরনের খসড়া তালিকা তৈরি করে। ‘ক’ তালিকা সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত। ‘খ’ তালিকা কমিটির দ্বিধাবিভক্ত মতের ভিত্তিতে করা। ‘গ’ হচ্ছে কমিটির নামঞ্জুর করা তালিকা।
‘গ’ তালিকাভুক্তদের মধ্যে যাদের গেজেট রয়েছে তাদের ভাতা বন্ধ করে দেন মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী। তবে তাদের গেজেট এখনও বহাল রয়েছে। এমন ২ হাজার ১৮৮ জন ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয়ে আপিল করেছেন। মন্ত্রণালয় প্রথম ধাপে ১,৫০৮, দ্বিতীয় ধাপে ৪১০টি এবং তৃতীয় ধাপে ২৭০টি আবেদন আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্তের জন্য জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) পাঠায়।
জামুকা সূত্র জানায়, ইতিমধ্যে ঢাকা বিভাগের ৩৭৯টি, সিলেটে ১৪৬টি, রংপুরে ১০৮টি, ময়মনসিংহে ৮১টি, রাজশাহীতে ২৬২টি, খুলনায় ২১৭টি, বরিশালে ২৯টি ও চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৫৫টি আবেদন তারা পেয়েছে। এছাড়া আরও কয়েকশ’ আবেদন কোন জেলা বা বিভাগের তা এখনও নির্দিষ্ট করা হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও জামুকার একাধিক কর্মকর্তা জানান, গেজেট বহাল রেখে ভাতা বন্ধ করায় ভুক্তভোগীদের মধ্যে ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি করেছে। প্রায় প্রতিদিন তারা মন্ত্রণালয় ও জামুকায় আসছেন এবং কবে আপিল শুনানি শুরু হবে সে ব্যাপারে জানতে চান। বিষয়টির দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।
এ প্রসঙ্গে ‘খেতাবপ্রাপ্ত, শহীদ ও যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ডে’র মহাসচিব আনোয়ার হোসেন পাহাড়ি (বীরপ্রতীক) বলেন, যাচাই-বাছাই কমিটির খামখেয়ালিপনায় গত এপ্রিল থেকে অনেক মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাচ্ছেন না। গেজেটও বহাল রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। তারা মুক্তিযোদ্ধা না হলে তাদের গেজেট ও সনদ বাতিল করে ভাতা বন্ধ করা হোক।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার জানামতে, শেরপুরের শ্রীবর্দী উপজেলার মমতাজ উদ্দিন ওরফে নন্দু ডাক্তার প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। লাল মুক্তিবার্তায় তার নাম রয়েছে। অথচ তার নামও যাচাই-বাছাই কমিটি নামঞ্জুর করেছে। সম্প্রতি তিনি মারা গেছেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, মূলত রাজনৈতিক কারণেই মুক্তিযোদ্ধাদের নামের তালিকা চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না। সরকার বদলের সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধার তালিকার পরিবর্তন প্রায় নিয়মে পরিণত হয়েছে। আর এ কারণেই দিন দিন বাড়ছে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা।