বিশ্বজুড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে একজন মানুষ নিজের প্রাণ নিয়ে নিচ্ছেন আর প্রতি বছর আত্মহত্যায় যুদ্ধের চেয়েও বেশি লোক মারা যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সোমবার প্রকাশিত প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
ফাঁসি দিয়ে, বিষ খেয়ে ও নিজেকে গুলি করে মেরে ফেলাই আত্মহত্যার সবচেয়ে প্রচলিত পদ্ধতি বলে প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে।
জনগণকে চাপ সামলাতে সহযোগিতা করার মাধ্যমে আত্মহত্যার প্রবণতা হ্রাসে ‘আত্মহত্যা প্রতিরোধ পরিকল্পনা’ গ্রহণ করার জন্য সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, “আত্মহত্যা একটি বৈশ্বিক জনস্বাস্থ্য ইস্যু। বিশ্বের সব অঞ্চলের সব বয়সী ও লিঙ্গের মানুষ এতে আক্রান্ত (এবং) প্রতিটি প্রাণহানীতেই প্রভূত ক্ষতি হয়।”
এতে বলা হয়েছে, বিশ্বব্যাপী সড়ক দুর্ঘটনার পর আত্মহত্যাই ১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের মৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ। ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী কিশোরীদের ক্ষেত্রে মাতৃত্বজনিত মৃত্যুর পর আত্মহত্যা দ্বিতীয় প্রধান ঘাতক, আর কিশোরদের ক্ষেত্রে সড়ক দুর্ঘটনা ও সহিংসতার পর আত্মহত্যায় মৃত্যু সবচেয়ে বেশি।
প্রতি বছর প্রায় আট লাখ লোক আত্মহত্যায় মারা যায়। এ সংখ্যাটি প্রতি বছর ম্যালেরিয়া বা স্তন্য ক্যান্সার অথবা যুদ্ধ বা নরহত্যার ঘটনায় মারা যাওয়া লোকদের সংখ্যার চেয়েও বেশি।
২০১০ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী আত্মহত্যার গড় হার নয় দশমিক আট শতাংশ হ্রাস পেলেও একই সময়ে আমেরিকা অঞ্চলে এ হার ৬ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
নিম্ন ও মধ্য আয়ের দেশগুলোতে নারী-পুরুষের আত্মহত্যার হার প্রায় কাছকাছি হলেও ধনী দেশগুলোতে নারীদের তুলনায় পুরুষদের আত্মহত্যার প্রবণতা প্রায় তিন গুণ।
“আত্মহত্যা প্রতিরোধযোগ্য,” বলেছেন ডব্লিউএইচও এর মহাপরিচালক টেডরোস আধানোম গেব্রিয়েসুস।
“জাতীয় স্বাস্থ্য ও শিক্ষা কর্মসূচীতে প্রমাণিত আত্মহত্যা প্রতিরোধক কৌশল অন্তর্ভুক্ত করার জন্য আমরা সব দেশের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি,” বলেছেন তিনি।
কিটনাশক নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি আরোপ আত্মহত্যার সংখ্যা দ্রুত হ্রাস করার অন্যতম কার্যকরী উপায় বলে জানিয়েছে ডব্লিউএইচও।
এ প্রসংগে শ্রীলঙ্কার গবেষণার কথা উল্লেখ করেছে ডব্লিউএইচও। এই দেশটিতে কিটনাশকের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার পর আত্মহত্যার সংখ্যা ৭০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে এবং ১৯৯৫ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৯৩ হাজার জীবন রক্ষা পেয়েছে বলে হিসাবে দেখা গেছে।